‘চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচন বাতিল করে ব্যালটে পুনর্নিবাচন দিন’
২১ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:০৩
ঢাকা: চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন বাতিল করে ইভিএমের পরিবর্তে ব্যালটে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচন প্রবাসী ভোটার, মৃত ব্যক্তি এমনকি জেলে রয়েছেন এমন নাগরিকরাও ভোট দিয়েছেন। ফলে চট্টগ্রাম-৮ আসনের নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের চেয়েও অনেক বেশি খারাপ হয়েছে।’
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাকক্ষে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল। বৈঠক শেষে দুপুরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ১৭০ পোলিং স্টেশনের মধ্যে সবগুলোই দখল করে নিয়েছিল ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী কেন্দ্রে বাইরের কেউ থাকতে পারবেন না, এলাকায় বহিরাগতরা অবস্থান করতে পারবেন না, গাড়ি মোটরসাইকেল চলবে না। কিন্তু সেখানে চট্টগ্রাম বিভাগের যত মেয়র, কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থান দৃশ্যমান ছিল। সবাই সরসরি কেন্দ্র দখল করেছে, মিছিল করেছে। যেখানে সব ভোট কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। মৃত মানুষের ভোট, প্রবাসীদের ভোট, জেলে থাকাদের ভোটও পড়েছে। ইভিএমে ভোট ডাকাতি হয়, সেটা চট্টগ্রামে আবারো প্রমাণিত হয়েছে।
আমির খসরু বলেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের ভোটে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। আর যারা যেতে পেরেছেন, তারা শুধু আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছেন, তাদের ভোটার ব্যালট ইউনিটে অন্যরা দিয়ে দিয়েছেন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও যেখানে ইভিএমে ভোট হয়েছে সেখানেও এমন হয়েছে, চট্টগ্রামে তার চেয়েও খারাপ হয়েছে।
তিনি বলেন, কমিশনকে অনুরোধ করেছি চট্টগ্রামের নির্বাচনটি বাতিল করে নতুন করে ব্যালটে ভোট দিতে। ব্যালটের মাধ্যমে পুনর্নির্বাচন দিন। কারণ দিনের আলোর মতো পরিস্কার সেখানে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ ছিল না। সেখানে কেন্দ্রে দখল করেছে, ইভিএমের পাসওয়ার্ড নিয়েছে, ব্যালট ইউনিটে তারা ভোট দিয়েছে। আমরা বলেছি ভোট বাতিল করে ব্যালটে ভোটের ব্যবস্থা করুন। ইভিএমের ভোটে জালিয়াতি হলেও চ্যালেঞ্জের কোনো সুযোগ নেই। ভারতের চেয়ে ১১ গুন টাকায় ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছে। কিন্তু সেখানে অডিট ট্রেইল ও পেপার ট্রেইল নেই। ভারতের মেশিনে তা আছে। পাঁচ ছয়টি দেশে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে কমিশন বা সরকার নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের কমিশন এবং সরকার প্রশ্নবিদ্ধ।
কমিশন কি বলেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিশন বলছে সব ঠিক আছে। আগে ৩০ ডিসেম্বরেও বলেছিল সব ঠিক আছে, ২৯ ডিসেম্বর রাতে সারাদেশে ভোট হয়েছে, তখনও বলেছে সব ঠিক আছে, এখনও বলছে সব ঠিক বলছে। তিনি বলেন, সারাদেশে ভোটের মাঠে যেমন আওয়ামীলীগে দখলদারিত্ব চলছে। তেমনি কমিশনের ওপরও আওয়ামীলীগের দখল দারিত্ব চলছে।
তিনি বলেন, আমাদের উত্তরের প্রার্থী তাবিথের উপর হামলা হয়েছে। এ্যানিসহ ১৫ জন হামলায় আহত হয়েছে। ঢাকার নির্বাচনে তারা রাস্তার ওপর অফিস করেছে, পোস্টার লাগিয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের উপর সরকার খবরদারি চালাচ্ছে বলে মনে করি। কমিশনের উপর সমস্ত আস্থা হারিয়ে ভোট ব্যবস্থা চলছে। কমিশনের উপর ন্যুন্যতম আস্থা থাকলে বিএনপি ভোটে অংশ নিচ্ছে এটি কমিশনের প্রতি আস্থা হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু জনগণের কোনো আস্থা নেই।
বৈঠকে ইসির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মোঃ রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম। এছাড়াও ছিলেন ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে অন্যদের মধ্যে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, চট্টগ্রাম দক্ষিনের বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।