Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাবিতে ৪ ছাত্রকে মারধরের পর পুলিশে সোপর্দ, প্রতিবাদে বিক্ষোভ


২২ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:৫৩

ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে শিবির সন্দেহে চার শিক্ষার্থীকে মারধর করে শাহবাগ থানায় সোপর্দের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তবে থানায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কোনো প্রমাণ না থাকায় মুচলেকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।

এদিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার বিকেলে ‘সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যে’র ব্যানারে ডাকসুর ভিপি নুরুল হকের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ। মিছিলটি রাজু ভাস্কর্য থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং একাডেমিক বিল্ডিং প্রদক্ষিণ করে।এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মিছিল নিয়ে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সামনে দাঁড়িয়ে ডাকসু’র ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, গতকাল রাতে জহুরুল হক হলে ছাত্রলীগ চারজন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেছে। ছাত্রলীগের নির্যাতন নিপীড়ন থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থাকতে ছাত্রলীগ কেন শিক্ষার্থীদের ওপর হস্তক্ষেপ করবে। ছাত্রলীগ যে নির্যাতন করেছে, তা আমি শাহবাগ থানায় গিয়ে দেখেছি। তাদেরকে আবরারের মতো পিটিয়েছে। হাতুড়ি দিয়ে, স্টাম্প দিয়ে পিটিয়েছে। হয়তো এই চারজনের মধ্যে কেউ একজনের আবরারের মতো পরিণতি হতে পারত। এখন অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া সত্ত্বেও দলকানা প্রশাসন ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনের পরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

জানা যায়, শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্টতা স‌ন্দে‌হে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হলের গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে আসে ছাত্রলীগের কর্মীরা। শিবিরের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কী না জানতে ছাত্রলীগের নেতারা তাকে মানসিক চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু স্বীকার না করায় ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করেন তারা। পরে মোবাইলের মেসেঞ্জারে চেক করে মুকিমের আরও তিনজন বন্ধুকে ডেকে আনা হয়। তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন ও আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

এ সময় হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা, হল সংসদের সহ-সভাপতি সাইফুল্লাহ আব্বাসি অনন্তসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা এসে রড, লাঠি দিয়ে তাদের মারধর করেন। এতে গুরুতর আহত হন তারা।

নির্যাতনের পর আহত শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সহযোগিতায় শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন । রাতেই তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান পুলিশ।

পরে বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল তিনটার দিকে মুচলেকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক।

এদিকে থানা থেকে ছাড়া পেয়ে ভুক্তভোগী মো. মুকিম চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে অতিথি কক্ষে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেছে। পরে হলের ছাদে নিয়ে হল সংসদের ভিপি অনন্তের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের হল ক্যান্ডিডেট আমির হামজা, আনোয়ার হোসেন,কামাল উদ্দিন রানা, ইমন ও শাহিন আলমসহ আরও কয়েকজন পালাক্রমে রড ও স্টাম্প দিয়ে পেটায়। পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এদিকে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে বিচারের দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান নিয়েছেন ভুক্তভোগী মুকিম।এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্তু তাকে সেখানেই অবস্থান নিতে দেখা যায়।

এ বিষয়ে জানতে হল সংসদের ভিপি অনন্তকে ফোনে না পাওয়া গেলেও হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওরা হলে অনেকদিন ধরে শিবিরের দাওয়াত দেয়। হলে থেকে নাশকতার পরিকল্পনা করে। তাই তাদের পুলিশে দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনকে একাধিকবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে আবাসিক শিক্ষক মো. বেল্লাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘ওরা হলের মধ্যে থেকে আইনবিরোধী কাজ করেছে। তারা একজন ছাত্র আরেকজনকে নিষিদ্ধ ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করছে। এ জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে থানায় দেওয়া হয়েছে।’ তবে শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।

ছাত্রকে মারধর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঢা‌বি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর