দেশে ঋণখেলাপি ৮২৩৮ জন, ঋণের পরিমাণ ৯৭ হাজার কোটি টাকা
২২ জানুয়ারি ২০২০ ২০:৪১
ঢাকা: জাতীয় সংসদে ৮ হাজার ২৩৮ ঋণখেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। খেলাপিদের এ সব প্রতিষ্ঠানের খেলাপিঋণের পরিমাণ প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এসব কোম্পানির পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮৩৬ দশমিক চার লাখ টাকা।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্ব একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে বুধবার (২২ জানুয়ারি) আহসানুল ইসলাম টিটুর (টাঙ্গাইল-৬) আসনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী পরিশিষ্ট-গ’তে কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানওয়ারী একশ’ সাত পৃষ্ঠাব্যাপী এ তালিকা তুলে ধরেন। এর আগে, গতবছর জুন মাসে অর্থমন্ত্রী তিনশ ঋণখেলাপির তালিকা তুলে ধরেছিলেন।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদকে জানান, বাংলাদেশে কার্যরত সকল ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সিআইবি ডাটাবেজে রক্ষিত ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসভিত্তিক হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী এসব কোম্পানির কাছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৬ হাজার ৯৮৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর পরিশোধিত ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮৩৬ কোটি ৪ লাখ টাকা।
এসব ঋণখেলাপি কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে রিমেক্স ফুটওয়্যার যার খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৮শ’ কোটি টাকা, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৩শ’ কোটির উপরে, তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালি কমপোজিট লেদার ওয়ার লিমিটেড, যার ঋণের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ৩শ’ কোটি টাকা এবং সব চেয়ে কম ঋণমাত্র ১ কোটি টাকা এ আই ইন্ডাট্রিজের। যদিও এসব কোম্পানিগুলোর খেলাপি ঋণের টাকার অঙ্কের পরিমাণ ছাপার অস্পষ্টতা থাকায় তালিকা সংসদে তুলে ধরার উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।
সংসদে প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী তালিকায় প্রথম ৫০টি কোম্পানির মধ্যে রয়েছে রিমেক্স ফুটওয়্যার লি, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস, রূপালী কম্পজিট লেদারওয়্যার লিমিটেড, রাইজিং স্টিল লিমিটেড, মোহাম্মদ ইলিয়াম ব্রাদার্স (পিভিটি) লিমিটেড, এস এ ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, সামনাজ সুপার ওয়েল লিমিটেড, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লি. অ্যালোকোট লিমিটেড, গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডাইং, বুলট্রেড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড, বেনট্রেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, কমপিউটার সোর্স লি. রুবাইয়া ভেজিটেবল ওয়েল লি, বাংলাদেশ কমিউনিকেশনস লি, লেক্সো লি. আলফা কমপোজিট টাওয়েলস প্রভৃতি।
ক্ষুদ্র ঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ২৪ শতাংশ: সরকারি দলের সদস্য মো. হাবিবুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে জানান, ‘বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী ক্ষুদ্রঋণের সর্বোচ্চ সুদের হার ২৪ শতাংশ। ইতঃপূর্বে বেসরকারি সংস্থা কর্তৃক অধিক সুদে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের থাকলেও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন-২০০৬ এর আওতায় সরকার কর্তৃক এমআরএ প্রতিষ্ঠানের পর হতে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক ব্যয়, প্রশাসনিক ব্যয়, ঋণ ক্ষতি সঞ্চিতি ও প্রফিট মার্জিন ইত্যাদি পর্যালোচনা এবং সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করে ক্রমহ্রাসমান স্থিতি পদ্ধতিতে ক্ষুদ্র ঋণের সুদহার নির্ধারণ করে দেওয়া হচ্ছে।
দেশে করদাতার সংখ্যা ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৯৭৮ জন: সরকারি দলের সদস্য নাছিমুল আলমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, গতবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করদাতার সংখ্যা ৮ লাখ ২৩ হাজার ২৩১ জনে বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার ৯৭৮ জনে দাঁড়িয়েছে। গতবছর ছিল ৩৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৪৭ জন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোট কর আদায় হয়েছে ৭২ হাজার ৮৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
সরকারি দলের সদস্য বেগম শামসুন নাহারের অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী যারা রিটার্ন দাখিল করেননি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
একবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে: গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বিগত একবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর হার প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থ বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
তিনি আরও জানান, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৯ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা গত বছরের প্রথম ছয়মাসের তুলনায় ২৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেশি। মন্ত্রী জানান, রেমিট্যান্স গ্রহণ ও গ্রাহকের নিকট সরাসরি পৌঁছানোর লক্ষ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহের সঙ্গে বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজের ড্রয়িং ব্যবস্থাপনাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিকমানের কোম্পানির সঙ্গে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ২৪৫টি ড্রয়িং ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। যা রেমিট্যান্স আহরণের উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। আরও নতুন নতুন ব্যবস্থা স্থাপনের অনুমোদন প্রদান অব্যাহত আছে।
তিনি আরও জানান, বিদেশস্থ এক্সচেঞ্জ হাউজের সঙ্গে বাংলাদেশস্থ ব্যাংকের ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনকে সহজতর করার লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার পদ্ধতিতে ড্রয়িং স্থাপনের ক্ষেত্রে রক্ষিতব্য ব্যাংকের ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপিত হবে। যা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।