Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইভিএমে ৫০% ভোট না পড়লে ফের ভোটের পক্ষে ইসি মাহবুব


২২ জানুয়ারি ২০২০ ২১:০১

ফাইল ছবি

ঢাকা: ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) যদি ৫০ শতাংশ ভোট না পড়ে, তাহলে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে পুনরায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার। এর জন্য নির্বাচনি বিধি-বিধান পরিবর্তনের প্রয়োজন হলে সেটাও করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরশন নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার (২২ জানুয়ারি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে নিজের এমন মত তুলে ধরেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ভোটগ্রহণে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে ভোটারদের মধ্যে দ্বিধা রয়েছে উল্লেখ করে মাহবুব তালুকদার বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ছাড়া ব্যালট পেপারে যে ২৯৪টি আসনে ভোট হয়েছে, সেসব আসনে ভোটের হার ছিল শতকরা ৮০ ভাগ। অন্যদিকে ইভিএম আসনগুলোতে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম ভোট পড়েছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে সব লো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এই নির্বাচনে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। এর কারণ, ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মনে ভীতি আছে।

মাহবুব তালুকদার মনে করছেন, ঢাকার দুই সিটিতে ভোটগ্রহণে ইভিএমের ব্যবহার কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষার সমান। তিনি বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সাফল্যের ওপর নির্ভর করছে এই যন্ত্রটির ভবিষ্যত। এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার প্রশ্নবিদ্ধ হলে শুধু নির্বাচন নয়, ইভিএম যন্ত্রটির ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। আমার মতে যেকোনো নির্বাচনে শতকরা ৫০ ভাগ ভোট না পড়লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এজন্য বিশ্বের অনেক দেশে ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় ভোট নেওয়া হয়। ইভিএম সম্পর্কে আমার বক্তব্যের বটমলাইন হলো, ইভিএমে যদি ৫০ শতাংশ ভোট না পড়ে, তাহলে ব্যালট পেপারে পুনরায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। এজন্য নির্বাচনি বিধি-বিধান পরিবর্তন প্রয়োজন হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

মাহবুব তালুকদার এর আগে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে মত দিয়েছিলেন। তবে সে অবস্থান থেকে সরে এসে এখন তিনি এই যন্ত্র ব্যবহারের পক্ষে রয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহারে সব রাজনৈতিক দল ও অংশীজনের মধ্যে ঐক্যমত্য প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থায় এ ধরনের সমঝোতার রীতি গড়ে ওঠেনি। ইভিএম নিয়ে আমার সমালোচনা থাকলেও দু’টি কারণে আমি এর ব্যবহারের পক্ষে। প্রথমত, এতে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে বাক্স ভর্তি করার সংস্কৃতির অবসান ঘটতে পারে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে শতকরা একশত ভাগ ভোট পড়ার যে অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি, ইভিএম ব্যবহারে তারও অবসান হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে একাদশ জাতীয় সংসদের যে ফল রয়েছে, তাতে দেখা যায়, ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। পৃথিবীতে কোনো নির্বাচনেই এ ধরনের ভোটার উপস্থিতির নজির নেই। রাতে ব্যালট পেপারে বাক্স ভর্তি ও কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার অপবাদ থেকে আমরা মুক্ত হতে চাই।

ইভিএম ব্যবহারে দ্বিধার অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইভিএমের বিরুদ্ধে যারা রয়েছেন, তাদের বলতে চাই, বর্তমানের রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে— যেকোনো অবস্থাতেই আসন্ন দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহৃত হবে। যারা ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করছেন, তাদের বক্তব্য অনেক সময় তাদের সমর্থক ভোটারদের মনেও বিভ্রান্তি তৈরি করছে। এ অবস্থায় তাদের সমর্থক ভোটাররা যেন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ইভিএমে ভোট দিতে আগ্রহী হন, এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। আমার পরামর্শ, ইভিএমের জানাজা না পড়ে বরং এর জন্ম উৎসব পালনের কথা বিরোধিরা ভাবতে পারেন।

মাহবুব তালুকদার বলেন, ঢাকা মহানগরীজুড়ে এখন নির্বাচনের যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তার কিছুই দৃশ্যমান হয়নি কেন? জাতীয় নির্বাচন কি এই স্থানীয় নির্বাচনের চেয়ে কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল? এই অবস্থা কি নির্বাচন প্রক্রিয়া বা নির্বাচন ব্যবস্থার কোনো সংকট থেকে উদ্ভূত? এ প্রশ্নের জবাব আমাদের খুঁজতে হবে ভবিষ্যতের নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার স্বার্থেই। নির্বাচন ব্যবস্থাপনার নেতিবাচক দিকগুলো পর্যালোচনা করে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে যেন তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি। নির্বাচন কমিশন তাদের মাধ্যমেই নির্বাচন করে থাকে। কিন্তু নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে নির্বাচন কমিশনের অধীন, তা দৃশ্যমান নয়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পুলিশ আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কাছে ন্যস্ত, কিন্তু মানসিকভাবেও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত না হলে কোনো ফল আসবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যারা নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট থাকবেন, তাদের কাছে প্রত্যাশা— তারা নিজেদের কার্যক্রমে আইন ও শৃঙ্খলা শব্দ দু’টির বিশেষ তাৎপর্য অনুধাবন করবেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতি উৎসাহী কোনো কোনো সদস্যকে আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে কিংবা প্রয়োজনের সময় নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা যায়। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা থেকে বিরত থাকার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরদারি একান্ত জরুরি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি শেষ অনুরোধ জানিয়ে মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচনের সব ধরনের শৈত্যপ্রবাহ কাটিয়ে আপনারা রাজধানীবাসীর মনে উষ্ণতা ছড়াতে পারবেন। বিশেষভাবে বলতে চাই, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুজিববর্ষে। আমি মনে করি, এই নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত করার মাধ্যমে আমরা জাতির জনকের প্রতি সর্বোত্তম উপায়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারি।

ফাইল ছবি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইভিএম নির্বাচন কমিশন ব্যালট মাহবুব তালুকদার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর