প্রয়োজনে নির্বাচন পেছানো হোক: মির্জা ফখরুল
২২ জানুয়ারি ২০২০ ২১:২৬
ঢাকা : ইভিএম বাদ দিয়ে ব্যালটে ভোট নিতে প্রয়োজনে নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে গুলশানে হোটেল লেকশোরে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (এ্যাব) এর এক উদ্যোগে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ইভিএমের কারিগরি অপব্যবহারের মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফল কারচুপির সম্ভাব্য সুযোগ’ শীর্ষক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব এ দাবি জানান।
ফখরুল বলেন, ‘মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে। আরেকটি ১ ফেব্রুয়ারি আসছে। যে পদ্ধতিতে ঢাকার নগরবাসীর ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হবে। আমরা তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছি। এখনও বলছি, এ ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখুন এবং প্রয়োজনে ভোট পিছিয়ে দিয়ে ব্যালটে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় এদেশের মানুষ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না।’
ইভিএমের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন, আজকে সবাই জনগণের কাছে বলি যে, তারা অত্যন্ত জোরে তাদের ভয়েস, তাদের কণ্ঠকে সোচ্চার করুন যে, আমরা ইভিএম মানি না। ইভিএম কখনোই জনগণের সঠিক রায়ের প্রতিফলন ঘটাবে না। আমরা এই ইভিএম প্রত্যাখান করছি।’
কেন ইভিএম পদ্ধতির বিরোধিতা করছে তা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘মেশিন ব্যবহৃত হয় মানুষের দ্বারা। মেশিনের পেছনে কারা থাকবেন সেটি একটি জরুরি প্রশ্ন। যেহেতু এ মেশিনের পেছনে বর্তমান নির্বাচন কমিশন আছেন এবং এ সরকার রয়েছে যারা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থাটাকে পরিচালনা করছে তাদের ওপরে মানুষের কোনো আস্থা নেই। এবারকার দুই সিটি করপোরেশনের পুরো নির্বাচনটা ইভিএম দ্বারা ভোট গ্রহণ করা হবে। আমরা প্রথম থেকে এর আপত্তি জানিয়ে আসছি। নির্বাচন কমিশনেও আমাদের ডেলিগেশন গিয়েছিলো তারা গিয়ে আপত্তি জানিয়ে এসেছেন।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মঙ্গলবার আমাদের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর সরকারি দলের একজন কাউন্সিলর প্রাকাশ্যে আঘাত করলেন, তার ওপর আক্রমণ চালালেন। দূঃখজনকভাবে শুধু না, দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনকভাবে ওই দলের (আওয়ামী লীগ) মেয়র প্রার্থী বললেন, এটা তাদের দলের নিজস্ব প্রবলেম। ভেরি শেইম, দুর্ভাগ্যজনক। এরকম একজন ব্যক্তি যিনি এ কথা বলতে পারেন তার তো মেয়র হওয়ার কোনো যোগ্যতাই থাকতে পারে না।’
দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘ইভিএম একটা মাত্র ঘটনা, এটিমাত্র মেশিন। এরকম হাজারও মেশিন দিয়ে আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। আমাদের পুরো রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।’
বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংসের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘একজন ব্যক্তির জন্য যে বিচার আরেক ব্যক্তির জন্য সেরকম বিচার নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় দুই বছর আটকিয়ে রাখা হয়েছে। যে জামিন তিনি পাওয়ার যোগ্য, যেটি আমার সংবিধানের মধ্যে আছে সেই জামিনও তাকে দেওয়া হচ্ছে না শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে।’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফয়সাল আলীমের নেতৃত্বে ড. এস এম আবদুর রাজ্জাক, আশরাফউদ্দিন বকুল, তানভীরুল হাসান, আসাদুজ্জামান ও মিজানুর রহমানসহ নিয়ে একটি টিম। সেমিনারে তথ্য চিত্রের মাধ্যমে ইভিএমে ভোট কারচুপির নানাদিক উপস্থাপন করা হয়।
এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের সেলিম ভূঁইয়া বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, জহির উদ্দিন স্বপন, শাম্মী আখতার, আশরাফউদ্দিন বকুল, নেওয়াজ হালিমা আরলী, কাদের গনি চৌধুরী, শামীমুর রহমান শামীম, জেবা আমিনা খান, হাসান জাফির তুহিন, রফিকুল ইসলাম, আবদুল হালিম মিঞা, ডা. আবদুস সেলিম, শায়রুল কবির খান, প্রকৌশলী মাহমুদ হোসেন, মিয়া মো. কাইয়ুম, এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আলমগীর হাছিন আহমেদ।