ফের সোমবার শুরু হবে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ
২২ জানুয়ারি ২০২০ ২২:২৮
ঢাকা: বহু প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ‘হাতিরঝিলের ক্যানসার’খ্যাত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজের উদ্বোধন হয়েছে। বুধবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম আনুষ্ঠানিকভাবে ভবনটি ভাঙার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এসময় তিনি জানান, আগামী ছয় মাসের মধ্যেই ভবনটি ভেঙে ফেলা হবে। পর্যায়ক্রমে হাতিরঝিল থেকে অনুমোদনবিহীন সব স্থাপনা অপসারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, ভবন ভাঙার কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের পরিচালক নছরুল্লাহ খান রাশেদও বলেন, আমরা ছয় মাসের মধ্যে সুন্দরভাবে কাজটি শেষ করব।
বুধবার উদ্বোধনের মধ্য দিয়েই দিনের কাজ শেষ হয়েছে। নছরুল্লাহ জানান, সোমবার থেকে আবারও ভবন ভাঙার কাজ শুরু করবেন তারা। এরকম ভবন ভাঙার কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবন ভাঙার পর ভবনের জঞ্জাল জুরাইনে নিয়ে যাওয়া হবে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজের উদ্বোধন হওয়ার কথা ছিল বুধবার সকাল ১০টায়। পরে সময় পরিবর্তন করে সাড়ে ১২টায় নির্ধারণ করা হয়। ওই সময় গণপূর্তমন্ত্রী বিজিএমইএ ভবনে এসে নিচতলার কিছু অংশ নিজ হাতে যন্ত্র দিয়ে উপড়ে ফেলে এই কাজের উদ্বোধন করেন। পরে মন্ত্রী গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে প্রথমে যাকে পেয়েছিলাম, তিনি কারিগরি কারণে পরে অপারগতা জানিয়েছেন। সে কারণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতাকে দিয়ে এই ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। কাজটি দেখভালের জন্য বুয়েট, সেনাবাহিনী, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, এমনকি ইমারত বিশারদদের প্রতিনিধি যুক্ত করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিকভাবে এই কাজ তদারকি করবেন। কোনোভাবেই যেন র্যাংগস ভবনের মতো কোনো বিপর্যয় বা প্রাণহানি না ঘটে, সেজন্য এসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রী আরও বলেন, প্রথমে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে ভাঙার কথা ভাবা হলেও পরে দেখা গেছে, পাশে একটি ফাইভ স্টার হোটেলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান আছে। ওই ধরনের কাজ করতে গেলে এর গতিবেগ হবে অনেক বেশি। এতে করে আশপাশের ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সবদিকে ধুলা ছড়িয়ে পড়লে পরিবেশেরও ক্ষতি হবে। সেজন্য যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবন ভাঙার পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত আছেন বলেও জানান মন্ত্রী।
এদিন, ভবন ভাঙার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু না হলেও রাজউকের চার থেকে পাঁচটি এক্সক্যাভেটর এনে রাখা হয়। দুপুর ২টার মধ্যেই সেখানে বুধবারের কার্যক্রম শেষ করেন সংশ্লিষ্টরা।
ভবন ভাঙার যেসব শর্ত
বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙার সময় বেশকিছু শর্ত মেনে চলতে হবে ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজকে। কাজটি ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। ভবনের চারদিকে সেফটি কভার ও সেফটি নেটিং ব্যবহার করতে হবে এবং সেফটি ব্র্যাকেট স্থাপন করে মালামাল ব্যবহার করতে হবে। ভবন ভাঙার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির চলাচল, নিয়ন্ত্রণ ও কার্যরত অবস্থায় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। হেলমেট, সেফটি বুট ও ফলস প্রোটেকশনের মতো পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট সার্বক্ষণিক ব্যবহার করতে হবে।
রাজউক জানিয়েছে, ভবনের ওপরের অংশ থেকে নিচের অংশে পানি প্রবাহ ব্যাহত করে— এমন অংশ সম্পূর্ণরূপে ভেঙে ফেলতে হবে। ডাম্পিংয়ের সময় যথাযথ নিরাপত্তা নিতে হবে। দ্বিতীয় তলা থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত সব ধরনের কলাম, বিম, ছাদ, পাইলিং ফাউন্ডেশন ও বাহ্যিক ওয়াল (ত্রিক ও আরসিসি দেয়ালসহ) ভাঙার কাজ এবং রাশি অপসারণের চুক্তি সম্পাদনের তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। ছাদ, কংক্রিটের বিম ও কলাম ভাঙার কাজ ওপরের অংশ হতে শুরু করে নিচের দিকে অপসারণ করতে হবে।
এছাড়া, ভবন ভাঙার কাজ চলাকালীন সর্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য জেনারেটর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ভবন ভাঙার সময় যদি কোনো ব্যক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হন বা কারও জীবনহানি ঘটে, সেজন্য রাজউক কোনোভাবেই দায়ী হবে না। দ্বিতীয় পক্ষ অর্থাৎ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সব ধরনের দায়দায়িত্ব বহন করবে। ভবনের গ্লাস অপসারণের সময় সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ভবন সংলগ্ন ফুটপাত ও আশপাশের অংশে পথচারী ও যানবাহনের অব্যাহত চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। কাজ চলাকালীন সার্বক্ষণিক অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে হবে, অক্সিজেন গ্যাস ও অক্সিজেন মুখোশের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নেতৃত্বে একটি চিকিৎসক দল সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখতে হবে।
যেভাবে ভাঙা হবে বিজিএমইএ ভবন
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ জানিয়েছে, ভবনে কোনো বিপদজনক দ্রব্য থাকলে প্রথমেই তা শনাক্ত করে অপসারণ করা হবে। ভবন সংলগ্ন বিদ্যমান বেইলি ব্রিজটি অপসারণ করে সেখানে একটি উপযুক্ত রাস্তা নির্মাণ করা হবে। ভবন ভাঙার জন্য ভারী যন্ত্রপাতি ও যানবাহন রাখার জন্য পর্যাপ্ত স্থান তৈরি করা হবে। বাইরের গ্লাস ফিটিং অপসারণ করা হবে। এরপর অভ্যন্তরীণ ফিটিংস (বৈদ্যুতিক ফিটিংস, গ্যাস ওপানি ফিটিংস) অপসারণ করা হবে। পরে অপসরণ করা হবে ডেকোরেশন ও পার্টিশন। বেজমেন্ট ও ভূগর্ভস্থ ট্যাংক ইত্যাদি ভাঙা ও অপসারণ করা হবে সবার শেষে।
ভবন ভাঙার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি
ভবন ভাঙার কাজে এক্সক্যভাটর, বুলডোজার, কংক্রিট জ্যাকহামার, দীর্ঘ ও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেন, ড্রাম ট্রাক, ফর্ক লিফট, ওয়েল্ডিং মেশিন, বিভিন্ন ধরনের কাটিং মেশিন, বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ড টুলস ও গ্যাস কাটার ব্যবহার করা হবে।
ভাঙার কাজ তদারকিতে দুই টিম
ভবন ভাঙার কাজ তদারকিতে সার্বক্ষণিক দু’টি টিম কাজ করবে। এর মধ্যে টপ সুপারভিশন কমিটিতে থাকবে সাত জন। ওই কমিটির সদস্যরা হলেন— রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিদ্যালয়ের (বুয়েট) একজন প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ফায়ার ব্রিগেডের একজন প্রতিনিধি, সেনাবাহিনী (প্রকল্প কর্মকর্তা), রাজউকের অথরাইজড অফিসার (জোন-৬/১), হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও পরিচালক।
এছাড়া সার্বক্ষণিক তদারকি কমিটিতে থাকবেন হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (প্রকল্প কর্মকর্তা) ও হাতিরঝিল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বিজিএমইএ ভবন ভবন ভাঙার কাজ উদ্বোধন শ ম রেজাউল করিম