স্বৈরশাসকের হাতে জন্ম নেওয়া বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না
২২ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:৪৬
সংসদ ভবন থেকে: রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, ক্যান্টনমেন্টে অবৈধ সামরিক শাসকের হাতে জন্ম নেওয়া বিএনপির মুখে গণতন্ত্র-আইনের শাসনের কথা মানায় না। ক্ষমতায় থাকতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ ২১ বার বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে বিএনপি। নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়ে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে। তারা কোন মুখে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের কথা বলে? এ দলটির কোনো লজ্জাবোধ নেই, অনুশোচনা নেই।
প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ দাবি জানান।
আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম, সরকারি দলের তাহজীব আলম সিদ্দিকী, মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান, ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল, মোসাম্মাৎ খালেদা খানম, কাজী কানিজ সুলতানা, বিএনপির হারুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টির সালমা ইসলামসহ অনেকে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, দিন আজ বদলে গেছে, শেখ হাসিনার হাত ধরে ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠছে বাংলাদেশ। পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ আট দশমিক পাঁচ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। পাকিস্তান তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে ভারতের চেয়েও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আর এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী, প্রাজ্ঞ, কর্মঠ ও সৎ নেতৃত্বের কারণে।
বিএনপির হারুনুর রশীদ সরকারের সমালোচনা করে বলেন, রাষ্ট্রপতির ভাষণটি সত্য-মিথ্যার দলিল। মৃত্যু পথযাত্রী খালেদা জিয়াকে সাজা দেবেন, জামিন দেবেন না- আবার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান কোনদিনই কার্যকর হবে না। সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলা করা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না বলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আনা হয়েছিল। কিন্তু তা বাতিল করা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সঠিক দায়িত্ব পালন করেছে- রাষ্ট্রপতির ভাষণে এ দাবি একেবারেই অসত্য। জনগণ ভীতি-আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে, এক বছরে এক হাজার বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা হয়েছে। তিনি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করলে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা তীব্র প্রতিবাদ জানান।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার বলেন, উন্নয়নের অনুষঙ্গ হিসেবেই দেশে দুর্নীতি-লুটপাটের দৌরাত্ম দেখা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যখন দিনরাত খেটে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন, তখন একদল ইঁদুর-উইপোকা রাষ্ট্রীয় সম্পদ, জনগণের সম্পদ লুটে ব্যস্ত। লুটেরা-দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে দেশের সম্পদ রক্ষা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এদের শায়েস্তা করতে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই শুদ্ধি অভিযান আরও জোরদার করে জেলা-উপজেলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে কালোটাকার মালিক-লুটেরা-দুর্নীতিবাজতার যেন টাকার গরম দেখাতে না পারে। আর বাজার সিন্ডিকেটের কারসাজি এখনো বন্ধ করা যাচ্ছে না, ফলে বাজারের পণ্যমূল্যে কমানো যাচ্ছে না। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সুশাসন নিশ্চিত করাই হোক আমাদের প্রধান জাতীয় কর্তব্য।
ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ বলেন, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশকে সবদিক থেকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনগণের সকল মৌলিক অধিকার পূরণ করে যাচ্ছেন তিনি। সারাবিশ্ব বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিস্ময় বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ভূমি মন্ত্রণালয় আগে ইমেজ সংকটে ছিল। এখন সেটি আর নেই।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে তারই কন্যা শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রবৃদ্ধি আট ভাগের ওপর এবং মাথাপিছু আয় ১৯ শ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে, এর ফলে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জাতীয় পার্টির সালমা ইসলাম বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। মনে রাখতে হবে শুধু প্রধানমন্ত্রী একাই ক্লান্তিহীন পরিশ্রম করলে হবে না, পুরো প্রশাসনসহ নেতারাও পরিশ্রম না করলে কাঙ্ক্ষিত অর্জন হবে না। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। এসব ব্যাংক ডাকাত ও পুঁজিবাজার লুটকারী রাঘব-বোয়ালদের মুখোশ জাতির সামনে উন্মোচন করতে হবে। হাজার হাজার শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা পথে বসেছে, এর পেছনের গডফাদারদের ধরতে হবে।
তাহজীব আলম সিদ্দিকী বলেন, ক্যান্টনমেন্টে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে গড়া বিএনপি মুখে মুজিববর্ষ নিয়ে কটাক্ষ দেখলে অবাক হই না। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২১ বার চেষ্টা করেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছে, নির্যাতন করে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে। সেই বিএনপি আবার আইনের শাসনের কথা বলে।