Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ায় সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে’


২৩ জানুয়ারি ২০২০ ২১:৪২

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (২০১৯ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে যাওয়ার কারণেই ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র নিয়ে সরকার সংস্কার কার্যক্রম চালাচ্ছে। এতে করে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। ব্যাংক থেকেও সরকারের ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। বিপরীতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহের গতি ধীর হয়েছে। তবে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। তখন বেসরকারি ঋণপ্রবাহেও গতি আসবে। ফলে বেসরকারি খাতে এখন ঋণপ্রবাহের ধীরগতি দেশের অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীরর সভাপতিত্বে সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন সংসদে উপস্থাপন করে এসব কথা বলেন। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও আয়-ব্যয়ের গতিধারা এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোতে সুদের হার প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে আমানত ও ঋণের সুদের হার কিছুটা বেড়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে আমানতের সুদ হার ছিল ৫ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত বছর তা বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। একই সময়ে ঋণের সুদের হার ৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ থেকে সামান্য বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। সরকারি ব্যাংক ঋণের সুদের হার কম থাকলেও বেসরকারি ব্যাংক ও বিদেশি ব্যাংকের সুদের হার বেশি থাকার কারণে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে ঋণের সুদের হার বেড়েছে।

লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি

মুদ্রাস্ফীতি সহনীয় রাখতে সরকার গুরুত্ব দিয়ে আসছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে খাদ্য বহির্ভূত মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা বাড়লেও খাদ্য পণ্যের মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা কমেছে। মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যেই রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে সেপ্টেম্বরে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ওই সময় খাদ্য পণ্যের মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সে তুলনায় আগের অর্থবছরের একই সময়ে সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ওই সময় খাদ্য পণ্যে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ০৭ শতাংশ।

বাজেট ঘাটতি দশমিক শতাংশ

সংসদে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেট ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছর শেষে মোট বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশে। ঘাটতি অর্থয়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ও অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে জিডিপির ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ অর্থায়ন করা হয়েছে।

ব্যয় বেড়েছে

প্রতিবেদনের তথ্যের বরাত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে মোট সরকারি ব্যয় বেড়েছে ১৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ এবং বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে মোট বরাদ্দের ৮ দশমিক ৩ শতাংশে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

রাজস্ব আদায়ের হার কম

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরনের পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ কম। এ সময়ে কর রাজস্ব আহরণের পরিমাণ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে এবং কর বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের পরিমাণ ৪৫ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে।

অর্থমন্ত্রী সংসদকে বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি। এর জন্য সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। আমরা আশা করছি, এসব উদ্যোগের ফলে অর্থবছরের বাকি সময়ে রাজস্ব আদায়ে গতি আসবে।

চলতি অর্থবছরের নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের প্রস্তুতিজনিত কারণে এনবিআরের তথ্য মতে প্রথম প্রান্তিকে এনবিআর কর রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৬২ শতাংশ।

কমেছে রফতানি আয়, আমদানি ব্যয়

রফতানি আয় ৯ শমিক  ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে বলে সংসদে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রথম প্রান্তিক শেষে রফতানি আয় কমেছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বিশ্ববাণিজ্যে মন্দা ও অস্থিরতার কারণে রফতানি সামান্য কমলেও সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মাধ্যমে রফতানি আয়কে প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে, রফতানি আয়ের পাশাপাশি আমদানি ব্যয়ও কমেছে। ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমে প্রথম প্রান্তিতে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। রফতানিমুখী খাতের পণ্য আমদানি কিছুটা কম হওয়ায় এ সাময়িক অবস্থা দেখা দিয়েছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

এর পাশাপাশি আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ কমেছে বলেও জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আমদানি ব্যয় প্রথম প্রান্তিকের বাজেট প্রতিবেদন বাজেট প্রতিবেদন ব্যাংক ঋণ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ মূল্যস্ফীতি রফতানি আয় সঞ্চয়পত্র


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর