Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি


২৩ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:১৩

ঢাকা: বাংলাদেশে আশঙ্কাজনক হারে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে। প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় কম ক্ষতি হয়— এমন ভ্রান্ত ধারণা ও নিজেরে স্মার্ট হিসেবে উপস্থাপন করতে তরুণ প্রজন্ম এই ই-সিগারেটের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে বর্তমানে চলমান ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের (জনসংখ্যার বোনাস) এ সময়ে ৪৯ শতাংশ তরুণ জনগোষ্ঠী ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে শুরুতেই ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো থেকে সরকারি শেয়ার তুলে নিয়ে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকারকে আন্তরিক হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও অ্যান্টিটোবাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত যৌথ এক কর্মশালায় এসব দাবি জানানো হয়। রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে আয়োজিত কর্মশালায় বিভিন্ন গণমাধ্যামে কর্মরতরা অংশ নেন।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন আত্মা’র আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন। অতিথি ছিলেন দেশ টিভির সম্পাদক অলক দাস গুপ্ত। বক্তব্য রাখেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) গ্রান্ট ম্যানেজার আব্দুস সালাম, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের ও আত্মা’র কো-কনভেনার নাদিরা কিরণ। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আত্মা’র কো-কনভেনার মিজান চৌধুরী।

কর্মশালায় জানানো হয়, ভ্যাপিং ও ই-সিগারেটের ব্যবহার পূর্ব ও পশ্চিমের দেশগুলোতে বেশি হলেও বাংলাদেশ রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। দেশে ইমার্জিং টোবাকো পণ্যের ব্যবহার তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে বাড়ছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক উদ্বেগজনক। রাস্তাঘাট, ক্যাম্পাস, তরুণদের আড্ডাস্থল, এমনকি বিভিন্ন মার্কেট ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠা ভ্যাপিং ক্লাবে এসব পণ্যের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে চোখে পড়ছে।

বক্তারা বলেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে গড়ে উঠছে ভ্যাপিং ও ই-সিগারেটের অসংখ্য বিক্রয়কেন্দ্র। ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে ই-সিগারেট সামগ্রী নিয়ে আলোচনা, বিক্রি ও হাতবদল হচ্ছে।

তরুণ প্রজন্মের ই-সিগারেটের ঝুঁকিতে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বক্তরা আরও বলেন, সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশে মোট জনগোষ্ঠীর ৪৯ শতাংশই তরুণ, যাদের বয়স ২৪ বছর বা তার নিচে। এখন চলছে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্টের সময়। এটি চলবে ৩৫ থেকে ৪০ বছর। এই তরুণ জনগোষ্ঠীকেই টার্গেট করেছে ই-সিগারেট পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো। তাই শুরুর পর্যায়েই সরকার ইচ্ছা করলে এই মারাত্মক ক্ষতিকর ই-সিগারেট নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশে (বিএটিসি) বাংলাদেশ সরকারের শেয়ার রয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্টক ডিভিডেন্ট ছাড়া নগদ ডিভিডেন্ট বাবদ সরকার পেয়েছে মাত্র ২৮ কোটি টাকা। অথচ পরিচালনা পর্ষদে মনোনীত বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ব্যাপক সুবিধা আদায় করছে কোম্পানিটি।

কর্মশালায় জানানো হয়, ২০১৮ সালের জুন মাসে এক বিশেষ আদেশ জারির মাধ্যমে বিএটিবিসি’কে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বৈদেশিক বিনিয়োগের নামে জাপান টোবাকোর ব্যাপক বিনিয়োগ দেশের মানুষের মৃত্যু যেমন বাড়াবে, তেমনি সরকারের এ সংক্রান্ত অসুস্থতাজনিত চিকিৎসা ব্যয়ও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

কর্মশালায় বলা হয়, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৬ জন ই-সিগারেট সেবন করে মারা গেছেন। দেশটির ৪৯ অঙ্গরাজ্যে এক হাজার তিনশ’রও বেশি মানুষ এর কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল (সিডিসি)।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে ই-সিগারেট নিয়ে খুব বেশি আলোচনা না হলেও ক্ষতিকর এই সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছেই। বাংলাদেশে মূলত চীনের তৈরি অত্যন্ত সস্তা দামের ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে। আগে অভিজাত এলাকার নামি-দামি দোকানে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ানো এই পণ্য পাওয়া যেত, ব্যবহারকারীও ছিল অভিজাত পাড়ার উঠতি বয়সের তরুণেরা। এখন সাধারন সুপার মার্কেটের ফুটপাথেও পাওয়া যাচ্ছে ই-সিগারেট। আবার ব্যবহারকারীর সামাজিক অবস্থানেরও পরিবর্তন ঘটেছে। সাধারণ পরিবারের উঠতি বয়সের তরুণদের রাস্তায় যেতে যেতে ই-সিগারেট টানতে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে তরুণীরাও। ফলে ব্যাপকভাবে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আগেই ই-সিগারেট নিষিদ্ধের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রজ্ঞা ও আত্মা’র সংশ্লিষ্টরা।

অ্যান্টিটোবাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স আত্মা ই-সিগারেট নিষিদ্ধের দাবি প্রজ্ঞা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর