Tuesday 08 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চলন্তিকার আগুনে নিঃস্ব তারা


২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:৫৮ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ১২:০২

ঢাকা: পাঁচ মাসের ব্যবধানে ফের আগুনে পুড়ল চলন্তিকা বস্তি। মধ্যরাত পেরিয়ে ভোরের দিকে যখন গোটা বস্তি ঘুমিয়ে, ঠিক সেই সময় আগুন ছড়িয়ে পড়ে বস্তিতে। শুষ্ক শীতে সে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়তে সময় নেয়নি। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে এ ঘর থেকে সে ঘরে। শুধু ঘর তো নয়, সে আগুন পুড়িয়েছে বস্তিবাসীর স্বপ্ন আর সহায়ও।

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ভোর সোয়া ৪টার দিকে আগুন লাগে চলন্তিকা বস্তিতে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় সে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ভোর পৌনে ৬টার দিকে। এরপরও বেশকিছু সময় বস্তিতে ডাম্পিংয়ের কাজ চালিয়ে যান ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- দেড় ঘণ্টায় চেষ্টায় চলন্তিকা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে, দগ্ধ ১

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে এখনো আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানো সম্ভব হয়নি। কী পরিমাণ ঘর পুড়েছে, সে তথ্যও বলতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম। তবে বস্তিবাসী বলছেন, শতাধিক ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। এর বাইরে বস্তির বেশকিছু দোকান এবং বেশ কয়েকটি রিকশা ও ভ্যানও পুড়ে গেছে।

পুড়ে যাওয়া একটি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ষাটোর্ধ্ব হনুফা খাতুন। জানালেন, এটি তারই দোকান। স্বামীকে হারিয়েছেন অনেক আগেই। এক ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে মেয়েটিও মারা গেছে কয়েকবছর আগে। ছেলেকে নিয়ে এই বস্তিতে থাকেন তিনি।

হনুফা খাতুন বলেন, ১৯৮৫/১৯৮৬ সাল থেকে এই বস্তিতে থাকি। একটা দোকান ছিল। ওই দোকান দিয়েই সংসার চলত। আড়াই লাখ টাকার মালামাল ছিল দোকানে। সব পুড়ে গেছে। এখন একটা টাকার জিনিসও নাই দোকানে। সব ছাই হয়ে গেছে।

পাশেই একটি পুড়ে যাওয়া ঘরে ছাইয়ের স্তূপ ঘাঁটছিলেন রহিমা খাতুন। বয়স্ক এই নারীর এক ছেলে ও এক মেয়ের বসবাস এই বস্তিতে। তাদের দু’জনের দু’টো ঘর পাশাপাশি। রহিমা থাকেন তাদের সঙ্গে।

বিজ্ঞাপন

রহিমা সারাবাংলাকে বলেন, ছেলে-মেয়ের সাথে এই বস্তিতে থাকি। একটা দরকারে এনজিও থেকে এক লাখ টাকা লোন নিয়েছিলাম। সব টাকা ঘরে ছিল। ওই টাকা তো আর নাই। এখন দরকারই বা মেটাব কী দিয়ে আর লোনের কিস্তিই বা টানব কিভাবে?

বাদল নামে এক প্রৌঢ় জানালেন, তার ঘরটিও পুড়ে গেছে। রিকশার গ্যারেজে কাজ করেন তিনি। রাতে কাজ শেষে ঘরে ফিরেছিলেন ১০টার দিকে। ঘুমাতে ঘুমাতে প্রায় ১২টা বেজে গেছে। ভোরে আশপাশের মানুষজনকে ‘আগুন আগুন’ চিৎকারে ঘুম ভাঙে তার। ঘুম চোখেই বেরিয়ে আসেন। দেখতে না দেখতেই আগুনের শিখা ছড়িয়ে পড়ে তার ঘরেও। চোখের সামনে দেখেন, ঘরটি পুড়ে যাচ্ছে।

বাদল বলেন, আচমকা ঘুম ভেঙে বেরিয়ে আসায় ঘর থেকে কিছুই বের করে নিয়ে আসতে পারিনি। আমাদের সহায়-সম্বল বলতে তো তেমন কিছু নাই। যা কিছু ছিল, তাও আগুনের পেটে গেল।

ঘর, দোকান, রিকশা পুড়ে ছাই হওয়ায় এমন অনেকের আহাজারিতেই ভারি হয়ে উঠেছে চলন্তিকার বাতাস। বস্তিবাসী বলছেন, মাস পাঁচেক আগের আগুনের ক্ষতই তাদের অনেকে কাটিয়ে উঠতে পারেননি। এর মধ্যে নতুন করে এই আগুন সর্বস্বান্ত করেছে অনেককে।

চলন্তিকার এই আগুনে আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক নারী দগ্ধ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।

এর আগে, গত বছরের ১৬ আগস্ট সন্ধ্যা সোয়া ৭টার কিছু পরে মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের রূপনগর ঝিলপাড়ের এই বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব, পুলিশ ও ওয়াসার সম্মিলিত চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এর আগেই পুড়িয়ে যায় বস্তির প্রায় তিন হাজার ঘর।

সে ক্ষত কাটতে না কাটতেই ফের আগুনের হলকা বয়ে গেল চলন্তিকায়।

আগুন আগুনে দগ্ধ চলন্তিকা বস্তি টপ নিউজ

বিজ্ঞাপন

খুলনায় ৩ যুবককে কুপিয়ে জখম
৮ এপ্রিল ২০২৫ ২৩:৫৪

আরো

সম্পর্কিত খবর