আইসিজের আদেশের বাস্তবায়ন চান রোহিঙ্গারা
২৪ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:৪৪
কক্সবাজার: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলার অন্তরবর্তীকালীন আদেশকে স্বাগত জানিয়েছেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। শিগগিরই নিজ দেশে ফিরতে পারবেন, এমন আশায় বুক বাঁধছেন তারা। দ্রুত আদেশের বাস্তবায়নও চান তারা।
রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলায় বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক বিচার আদালত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় চারটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ আদেশের পরে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
আদালতের আদেশ শুনতে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই টেলিভিশনের সামনে ভিড় করতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। আদেশ শুনে আনন্দিত রোহিঙ্গারা বলেন, এই রায় একটি সম্মানজনক ও নিরাপদ প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখবে।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর সহসভাপতি মাস্টার মো. আব্দুর রহিম। গণমাধ্যম, আন্তর্জাতিক বিশ্বসহ যারা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা নিজ দেশে ফিরতে চাই। এই রায় আমাদের দেশে ফেরার পথ সুগম করবে। সেইসঙ্গে যে ছয় লাখ রোহিঙ্গা এখনো মিয়ানমারে রয়েছেন তাদের নিরাপত্তার জন্য ভালো হবে।
যুদ্ধাপরাধ নয়, গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিচার চলবে: আইসিজে
কথা হয় কয়েকজন রোহিঙ্গা নাগরিকের সঙ্গে। তারা বলেন, নিজ দেশে ফিরে যেতে তারা সবসময়ই আগ্রহী। এই রায়ের পর সেটার পথ সুগম হলো। রায়ের জন্য গাম্বিয়ার পাশাপাশি আদালতের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইনে হত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু করলে জীবন বাঁচাতে নতুন করে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া।
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে আইসিজের প্রধান বিচারপতি আবদুল কাভি আহমেদ ইউসুফ এই মামলায় রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিতে চারটি অর্ন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন।
বিচারক বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা, নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধে মিয়ানমারকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীসহ সকল সশস্ত্র বাহিনী ও সংগঠনকে গণহত্যার ষড়যন্ত্র থেকে নিবৃত্ত রাখতে মিয়ানমারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। গণহত্যার আলামত যাতে নষ্ট না হয় মিয়ানমারকে সে পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গা গণহত্যা, নির্যাতন এবং নিপীড়ন বন্ধে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে মিয়ানমারকে আগামী চারমাসের মধ্যে আইসিজে’তে প্রতিবেদন পেশ করতে হবে। এই মামলা চলাকালীন প্রতিমাসে ৬ মাস পরপর মিয়ানমারকে এই বিষয়ে এই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।