‘বাঁচিয়ে রাখতে হলে নদীকে জানতে হবে’
২৪ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:৪৫
বাংলাদেশের নদ-নদী গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নদীকে জানতে হবে এবং নদী বাঁচাতে সর্বস্তরের জনসাধারনকে মিলিত ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মত দিয়েছেন দেশের নদী বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) কুয়াকাটায় দুইদিন ব্যাপী পঞ্চম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে এই আহ্বান জানান বক্তারা।
পঞ্চম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে মূল নিবন্ধ পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন পানি সম্পদ এবং জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির।
মূল নিবন্ধে ড. ইমতিয়াজ আহমেদ দেশে আন্তর্জাতিক নদীগুলো নিয়ে কূটনৈতিক জটিলতা নিরসনের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘নদী জীবন্ত সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পর এখন সময় এসেছে নদীকে সমস্ত কূটনৈতিক জটিলতা থেকে মুক্ত করার। তা করা গেলে দেশের মানুষ যেমন উপকৃত হবে, তেমনি ভাবে মৃতপ্রায় নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ঝড় তুফান, বন্যা-জলোচ্ছ্বাস আসলে মানুষের মধ্যে যে ভয় সৃষ্টি হয়, তা তাদের মধ্যে থেকে যায়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই ভয় সংক্রমিত হয়। আগে দেখা যেত, দীর্ঘদিন পরপর এক একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতো। কিন্তু এখন একজন মানুষ তার জীবনকালেই বেশ কয়েকটা দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের এই ভয়টাকে দূর করাটা জরুরি।’
এছাড়া ড. ইমতিয়াজ নদী নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের মানসিকতার পরির্তনের জন্য সরকারকে স্কুল শিক্ষা পর্যায় থেকেই কাজ করার পরামর্শ দেন।
ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘নদীকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং টিকিয়ে রাখতে হলে নদীকে জানতে হবে। নদীর প্রতিটি ধাপ, চরিত্র জানতে হবে। নদীর প্রশস্ততা কমে গেলে অথবা নদী শাসন করা হলে নদীর ভারসাম্য নষ্ট হয়। আর তখনই নদীকে আমরা হারিয়ে ফেলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের নদীগুলো সর্বনাশ করছে এলজিইডি। আবার এলজিইডির সর্বনাশ করছেন স্থানীয় এমপিরা। তারা এলজিইডির উপর প্রভাব খাটিয়ে নদীর সঙ্গে যথেচ্ছ ব্যবহার করে। নিজেদের পছন্দ মতো অবকাঠামো নির্মাণ করে নদীর গতিপথ পাল্টে দেয় এবং কোনো কো্নো স্থানে নদীর গভীরতা কমিয়ে দেয়। ফলে আমাদের নদীগুলো দ্রুত নাব্যতা হারিয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।’
নদী রক্ষার জন্য সাধারণ জনগণকে প্রতিবাদে নামতে আহ্বান জানান তিনি। এছাড়াও স্থানীয় জনগণের জ্ঞান সংরক্ষণের উপর জোর দেন এই জলবায়ু বিশেষজ্ঞ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নদীর আইনগত অধিকারের উপর গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, আগামী প্রজন্মকে একটি টেকসই, উন্নত সমাজ গঠন নিশ্চিত করার জন্য নদীর আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠা, সব ধরনের জটিলতা নিরসন করতে হবে। নদী, পরিবেশ, নিজেদের এবং আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। আইনে নদী, জলাধার, পুকুর সব ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা রয়েছে এবং সেগুলো অনুসরণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নদীর উন্নয়নে সঠিক উদ্যোগটি নিতে হবে। নদী শুধু জীবিত সত্তা নয়, এটি মাতৃসত্তা।
এদিকে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে নদী এবং পানি বিষয়ক তিনটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। দ্বিতীয় দিনে আরো ছয়টি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হবে।
অধ্যাপক আইনুন নিশাত আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন