চীনের উহান থেকে ছড়াতে থাকা করোনা ভাইরাস আতঙ্কে বাতিল করা হয়েছে দেশটির সবচেয়ে বড় উৎসব নববর্ষের প্রায় সব আয়োজন। ২৫ জানুয়ারি চীনের নতুন বছর শুরু হওয়ার পর প্রায় সপ্তাহব্যাপী উদযাপিত হওয়া এই উৎসব এ বছর খুব বেশি বিবর্ণভাবে উদযাপন করেছেন চীনা নাগরিকরা।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত করনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এদিকে, নববর্ষের ছুটি উপেক্ষা করে চীনা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং। বৈঠক শেষে চীনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।
ইতোমধ্যেই, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) থেকে ৪৫০ জন মেডিকেল কোরের সদস্যকে করনোভাইরাসে আক্রান্তদের জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য উহান প্রদেশে পাঠানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে মেডিকেল কোরের ডাক্তার, নার্স এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রও পাঠানো হয়েছে সেখানে। চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এই ভাইরাসকে চিহ্নিত করা হয়েছে ২০১৯-এনসিওভি নামে। এই ভাইরাসের উপস্থিতি আগে কখনো মানবদেহে পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বাজারে বিক্রির জন্য রাখা সাপ, বাদুর বা অন্যান্য কোনো প্রাণীর মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। যদিও কোন প্রাণী এই ভাইরাসের জন্য দায়ী তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে, রোববার (২৬ জানুয়ারি) থেকে চীনে সকল ধরনের বন্যপ্রাণী ক্রয়-বিক্রয় এবং খাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে চীনের কৃষি মন্ত্রণালয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিরল প্রজাতির এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর ক্ষেত্রে এ নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।
এছাড়া, করোনাভাইরাস আতঙ্কে চীনের হুয়াংগাং, ইজোহু, জিংজিয়াং ও চিবিসহ মোট ১০টি শহরে মানুষ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাদের চলাচলের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, গণপরিবহনও চলছে না। উহান থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সকল নাগরিক এবং কনসুলেট অফিসে কর্মরতদের মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
উল্লেখ করা যায় যে, করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তাইওয়ান, ম্যাকাও, হংকং, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও নেপালেও শনাক্ত করা হয়েছে। ক্রমেই নতুন নতুন অঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।