Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মামা-ভাগনেকে অপহরণ, ডিবি’র অভিযানে ৫ দিন পর উদ্ধার


২৬ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:৪৯

ঢাকা: ২১ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়েছিল খালিদ হাসান ধ্রুব ও তার ভাগনে তানজিম আল ইসলাম দিবসকে। অভিযোগ দায়েরের পর তাদের উদ্ধারে নেমেছিল গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পাঁচ দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযানের পর শেষ পর্যন্ত ডেমরা এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাদের। অভিযানে তাদের অপহরণে জড়িত চক্রের আট সদস্যকেও গ্রেফতার করেছে ডিবি।

রোববার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

অপহরণকারী চক্রের গ্রেফতার আট সদস্য হলেন— মো. ফকর উদ্দিন, মাহমুদুর রহমান রাসেল, মো. রশিদুজ্জামান ওরফে তুষার, মো. শফিকুল ইসলাম, এইচ এম মশিউর রহমান ওরফে পাপ্পু, ইমতিয়াজ আহমেদ, আরিফুল ইসলাম ওরফে নিশান ও মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান।

আব্দুল বাতেন বলেন, ২১ জানুয়ারি মামা-ভাগনেকে অপহরণের পর পাঁচ দিন ধরে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগ। অবশেষে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে মামা-ভাগনেকে উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে আট অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

এসময় তাদের কাছ থেকে অপহরণের কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেটকার, তিনটি মোটরসাইকেল, ম্যাগজিনসহ একটি পিস্তল, পাঁচটি ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, পুলিশ সার্জেন্টের র‌্যাংক ব্যাজসহ একটি ইউনিফর্ম শার্ট এবং পুলিশ কনস্টেবলের একটি শার্ট, সাতটি স্টিলের লাঠি, তিনটি কালো রঙের ছোট-বড় ওয়্যারলেস সেট, চারটি পিস্তল সদৃশ্য লাইটার, পাঁচটি সিরিঞ্জ, ২০টি ইনজেকশন, একসেট সেনাবাহিনীর পোশাক তৈরির থান কাপড়, ১৫টি বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল সেট (সিম সংযুক্ত) এবং একটি আইপ্যাড উদ্ধার করা হয়।

আব্দুল বাতেন বলেন, গ্রেফতার চক্রের সদস্যরা একটি পেশাগত অপহরণকারী চক্র। এর আগে তারা অপহরণ করে কুড়িগ্রামে জেলও খেটেছে। তানজিমের বাবা তাদের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন। সেই সুবাদে অপহরণকারীরা তানজিম ও তার পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানত। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা তানজিম ও তার মামা ধ্রুবকে অপহরণ করে এবং ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

সংবাদ সম্মেলন শেষে মামা খালিদ হাসান ধ্রুব বলেন, ২১ জানুয়ারি সকালে তানজিম ফোন করে জানায়, অনেকদিন ধরে মামা-ভাগনের দেখা হয় না, তাই আজ আসবে। দু’জনে বের হব। এরপর দুপুর ১২টার দিকে তার কোনো সাড়া না পেয়ে মেসেঞ্জারে নক করি। ২টার দিকে সাক্ষাৎ হয় তাজমহল রোডে। এরপরই কয়েকজন আমাদের দু’জনকে অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়িতে তোলে। সেখানে প্রথমেই দু’জনের চোখ বেঁধে ফেলে। পেছন দিকে হাতমোড়া করে বাঁধে। এরপর পা দুটোও বেঁধে ফেলে।

মামা খালিদ হাসান বলেন, মুখ দিয়ে যেন কথা বলতে না পারি, সেজন্য টেপ দিয়ে মুখ আটকে রাখে। অন্ধকার ঘরে আমাদের আটকে রাখা হয়। প্রচণ্ডভাবে আমাদের মারধর করে তারা। খাবারে কিছু মেশানো থাকতে পারে— এমন আশঙ্কায় আমরা কিছু খেতে চাইতাম না। তবে তারা জোর করে দুই বেলা করে খাওয়াত আমাদের। টাকার জন্য তারা অনেক অত্যাচার করেছে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তানজিমকে কথাও বলিয়ে দিয়েছে। তারা বারবার বলছিল, টাকা না দিলে আজকের মধ্যেই মেরে ফেলবে। আমরা খুবই ভয়ে ছিলাম। শেষ পর্যন্ত আজ যখন চোখ খুলে দেওয়া হলো, তখন দেখলাম ডিবি পুলিশ।

তানজিম আল ইসলাম দিবস বলেন, প্রাইভেট সংস্থায় কাজ করার সুবাদে অনেক অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। অনেক অভিভাবক ফোন করত। ওই রকম একজন অভিভাবক সেজে সন্তানকে প্রাইভেট পড়ানোর কথা জানায় একজন। আমি বলে দেই, প্রাইভেট পড়াব না। না পড়ালেও অন্তত দেখা করার অনুরোধ করেন। তবে আমি মামার কাছে চলে যাই।

তানজিম বলেন, তাজমহল রোডে নামাজ পড়ে বের হতেই মামা আসেন। এর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কয়েকজন আমাদের অস্ত্র ঠেকিয়ে গাড়িতে তোলেন। চোখ বেঁধে নিয়ে যান। বুঝতে পারি, গাড়ি সড়কে সড়কে ঘুরছে। বিকেলের দিকে আব্বুর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় অপহরণকারীরা। এরপর আর এক মুহূর্তের জন্যও চোখ খুলে দেয়নি। টাকার জন্য তারা প্রচণ্ডভাবে মারধর করেছে। লাথি, কিল, ঘুষির শেষ ছিল না। সবশেষ শুক্রবার রাতে বাসায় ফোন করে টাকা চায়। শনিবার সকালের মধ্যে টাকা না দিলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে আমরা বেঁচে ফিরব। সকালে চোখ খোলা অবস্থায় দেখতে পেয়ে বুঝতে পারি, ডিবি পুলিশ আমাদের উদ্ধার করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, কুড়িগ্রাম জেলা আইজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহা. ফখরুল ইসলামের ছেলে তানজিম আল-ইসলাম দিবস ও তার শ্যালক খালিদ হাসান ধ্রুব। তানজিম আল ইসলাম দিবস রাজধানীর ধানমন্ডির ভার্টিক্যাল হরিজন (ভিএইচ) ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এ-লেভেল ও খালিদ হাসান ধ্রুব ঢাকা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।

গত ২১ জানুয়ারি দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে অপহরণ করা হয় তাদের। পরে ২২ জানুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে অপরিচিত একজন তানজিমের মাকে ফোন করে জানায়, তানজিম ও তার মামা ধ্রুবকে অপহরণ করা হয়েছে। তাদের জন্য ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে চক্রটি। তানজিমের বাবা এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় জিডি করেছিলেন।

৫ দিন পর উদ্ধার অপহরণ ডিবির অভিযান মামা-ভাগনেকে অপহরণ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৮ বিভাগেই বৃষ্টির পূর্বাভাস
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:২৬

সম্পর্কিত খবর