‘বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বিএনপির চোখেই পড়ে না’
২৬ জানুয়ারি ২০২০ ২২:৪২
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকার দলীয় মন্ত্রী-এমপিরা বলেছেন, সারাবিশ্ব বলছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বিষ্ময়কর, উন্নয়নের রোলমডেল। কিন্তু এগুলো বিএনপির চোখেই পড়ে না। কারণ এ দলটিতে গ্রেনেড হামলাকারী, অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গি-সন্ত্রাসী, খুনি ও স্বাধীনতাবিরোধীরা একত্রিত হয়েছে।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাতে জাতীয় সংসদে প্রথমে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও পরে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে এই আলোচনা হয়। আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালিক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সরকারি দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, নাসির উদ্দিন, সুলতানা নাদিরা, খন্দকার মমতা হেনা লাভলী, তাহমিনা বেগম ও সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, গণফোরামের সুলতান আহমেদ মনসুর আহমেদ এবং বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সদস্য রওশন আরা মান্নান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও সাহসী নেতৃত্বে সবদিক থেকে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। সব সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। গ্রেনেড হামলাসহ ২১ বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুভয়কে জয় করে সন্ত্রাস-মাদক-দুর্নীতি-দারিদ্র্যতা-নিরক্ষতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। এমনকি তিনি এসব যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস-নাশকতা মোকাবিলা করে উপহার দিয়েছেন শান্তিময় উন্নত-সমৃদ্ধ ও অগ্রগতির বাংলাদেশ।’
ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রূপকল্প-২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠবে। এজন্য সবার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। এরই মধ্যে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে। উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সবাইকে আরও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারবে। শেখ হাসিনার হাত যত শক্তিশালী হবে, তত বেশি দেশ উন্নয়ন ও অগ্রগতি পাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেসব এলাকায় গ্যাস লাইন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না সেসব এলাকায় এলপিজি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। ব্যাপকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চলছে। শতভাগ শিল্পায়নে গ্যাস ও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। গ্রাহকের কাছে কত সহজে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’
সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব বলছে, বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু একটি দল আছে বিএনপি। কোনো উন্নয়নই তাদের চোখে পড়ে না। তাদের ব্যাপারে করুণা প্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নেই। বিএনপির সহযোগী সংগঠন হচ্ছে গ্রেনেড হামলাকারী, জঙ্গি, নাশকতাকারী, অগ্নিসন্ত্রাসী, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিরা। এদের একটাই লক্ষ্য, শেখ হাসিনাকে বিনাশ করা, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ষড়যন্ত্র করা। বঙ্গবন্ধুর হত্যার ষড়যন্ত্রকারীর হাতে এ দলটির জন্ম। এদের ডাকে জনগণ সাড়া দেয় না। শেখ হাসিনার পরিবর্তে জনগণ কী তারেক জিয়া-খালেদা জিয়াদের আনবে? কোনোদিনই তাদের সেই স্বপ্ন সফল হবে না।’
গণফোরামের সুলতান আহমেদ মনসুর আহমেদ বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কী হয়েছে জানি না, কিন্তু আমার আসনে সম্পূর্ণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। প্রতিকূল অবস্থা থেকে আমার ভোটাররা ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিয়েছে। চিরজীবন নৌকা নিয়ে চলেছি, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে আমাকে ধানের শীষ মার্কা নিয়ে সংসদে আসতে হয়েছে। কারণ ২০০৮ সাল থেকে আমি রাজনৈতিক কারাগারে ছিলাম। ধানের শীষ মার্কায় ভোট করলেও মুজিব কোর্ট পড়ে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে ভোট চেয়েছি। যারা একসময় বঙ্গবন্ধুকে হিটলার ও ভারতের চর বলেছিল, তারাও এখন দেখি নৌকা নিয়ে সংসদে। যে অবস্থানেই থাকি না কেন, যতদিন বেঁচে থাকব বঙ্গবন্ধুকে বুকে ধারণ করেই চলব। সবাইকে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় স্লোগান জয়বাংলাকে মেনে নিয়েই রাজনীতি করতে হবে।’
জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিতে সংকট চলছে। ব্যাংকখাতে খেলাপিঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জনগণের গচ্ছিত টাকা লুটপাট হচ্ছে। বিদেশে পাচার হচ্ছে। সরকারের ব্যয় কমেনি, বরং দিন দিন বাড়ছে। ছোট দুটি রেলওয়ের বাথরুম মেরামতের খরচ দেখানো হয়েছে এক লাখ টাকা। এভাবে প্রচুর টাকা লুটপাট হচ্ছে। শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা পথে বসেছে। জনগণের দাবি, এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে দ্রুত ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার করতে হবে।