বিশ্বে শিশু মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ ডায়রিয়া
২৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০০
ঢাকা: ডায়রিয়াজনিত রোগ এখনো বিশ্বব্যাপী শিশু মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ। ২০১৭ সালে ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ মারা গেছে। দক্ষিণ এশিয়া এবং সাব-সাহারা আফ্রিকা অঞ্চলে দুই বছরের কম বয়সী শিশু বেশি মারা যাচ্ছে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ১০ লাখ মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২৮ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় টাইফয়েড, কলেরা, অপুষ্টি, অন্ত্রের অন্যান্য রোগের চ্যালেঞ্জ ও সমাধান নিয়ে তিন দিনব্যাপী ‘১৫তম ডায়রিয়া ও পুষ্টি বিষয়ক এশীয় সম্মেলন (অ্যাসড)’ অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এবারের অ্যাসড সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- ‘টাইফয়েড, কলেরা, অপুষ্টি, অন্ত্রের অন্যান্য রোগের সঙ্গে পুষ্টি সংশ্লিষ্ট ব্যাধির সম্পর্ক: মানবিক বিপর্যয়ের যুগে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ।’
নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে টাইফয়েড, কলেরা অপুষ্টি এবং অন্ত্রের অন্যান্য রোগ-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এবং এসবের মোকাবিলার উপায় খুঁজে বের করতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্বের শীর্ষ পর্যায়ের জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আয়োজিত ১৫তম অ্যাসকড-এর আয়োজন করছে আইসিডিডিআর,বি। এতে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেইটস ফাউন্ডেশন।
সংবাদ সম্মেলনে আইসিডিডিআর,বি-র নির্বাহী পরিচালক ড. জন ক্লেমেন্স বলেন, ঢাকায় ১৫তম অ্যাসকড-এ মিলিত হতে যাচ্ছি আমরা। আমাদের লক্ষ্য হবে লাখ লাখ মানুষ যেসব বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চলেছে তা সমাধানের উদ্দেশ্যে নতুন নতুন জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান বিনিময় এবং আমাদের গবেষণা, উদ্ভাবন ও কর্মকৌশলসমূহ আলোচনা ও মূল্যায়ন করা।
আইসিডিডিআর,বি-র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও অ্যাসকড-এর সভাপতি ড. ফেরদৌসী কাদরী বলেন, তিন দিনের ওই সম্মেলনে ৮১টি মৌখিক এবং ১১৩টি পোস্টার উপস্থাপনা পেশ করা হবে। তিন দিনের এ সম্মেলনে ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়া ও আফ্রিকার ৪৫০ জনের বেশি সংখ্যক অংশগ্রহণকারী, ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী, গবেষক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং নীতিনির্ধারক উপস্থিত থাকবেন।
সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এডওয়ার্ড টি রায়ান বলেন, বাংলাদেশ সংক্রামক রোগ চিহ্নিতকরণ, নিয়ন্ত্রণ ও কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ ও বিতরণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পকিল্পনা ও উন্নয়ন) এবং সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, আমাদের জন্য অগ্রগণ্য বিষয় হল ২০৩০ সালের মধ্যে কলেরা রোগ নির্মূল করা এবং এই সম্মেলন অবশ্যই এই ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, কলেরা নিয়ে আমাদের গবেষণা চলছে, এরইমধ্যে স্টাডি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা জেনেছি, রাজধানীর ছয়টি স্থানে কলেরার প্রাদুর্ভাব বেশি। এসব এলাকাসমূহে ১২ লাখ মানুষকে কলেরার ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এরইমধ্যে আইইডিসিআরের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চার মিলিয়ন কলেরার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।
অ্যাসড সম্মেলনে চারটি বিশেষ সিম্পোজিয়াম রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন: এশিয়া ও আফ্রিকাতে ব্যবহারের সম্ভাবনা, ২০৩০ সালের মধ্যে কলেরা নির্মূলকরণ: উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ, এনভায়রনমেন্টাল এন্টারোপ্যাথি-আন্ত্রিক মাইক্রোবায়োটা-শৈশবকালীন অপুষ্টি এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ও আন্ত্রিক সংক্রমণের চিকিৎসার ওপর প্রভাব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা, আইসিডিডিআর’বি-র উপ-নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম, আইসিডিডিআর,বি-র সংক্রামক রোগ বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক অ্যালেন রস।