Monday 20 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তিন দিনব্যাপী অ্যাসকড সম্মেলন শুরু ঢাকায়


২৮ জানুয়ারি ২০২০ ২২:৫৩

ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ডায়রিয়া ও পুষ্টি বিষয়ক পঞ্চদশ এশীয় সম্মেলন (অ্যাসকড)। এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘টাইফয়েড, কলেরা ও অন্যান্য আন্ত্রিক রোগের সাথে পুষ্টি-সংশ্লিষ্ট ব্যাধির সম্পর্ক, মানবিক বিপর্যয়ের যুগে স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জ।’

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে প্রধান অতিথি হিসেবে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই সম্মেলনের আয়োজন করছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)। এতে সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ সরকার, বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা, সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কোঅপারেশন এজেন্সি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেইটস ফাউন্ডেশন।

বিজ্ঞাপন

অ্যাসকডের পঞ্চদশ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন ১৮টি দেশ থেকে আসা ৪৫০ জন গবেষক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, নীতিনির্ধারক ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন কর্মীরা। তারা টাইফয়েড, কলেরা, অপুষ্টি এবং অন্যান্য আন্ত্রিক রোগে আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনের উন্নয়ন সাধনের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী বলেন, পঞ্চদশ অ্যাসকডের ভেন্যু হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ায় আয়োজকদের ধন্যবাদ। এই সম্মেলনের আলাপ-আলোচনা ২০৩০ সালের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে বৈশ্বিক লক্ষ্য এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করবে।

আইসিডিডিআরবির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও অ্যাসকডের সভাপতি ড. ফেরদৌসী কাদরী সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, লক্ষ লক্ষ মানুষ যেসব বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য-সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে তা সমাধানের উদ্দেশ্যে জ্ঞান লাভ করা, জ্ঞান বিনিময় করা এবং গবেষণা, উদ্ভাবন ও কৌশলসমূহ আলোচনা ও মূল্যায়ন করার এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে অ্যাসকড।

বিজ্ঞাপন

অংশগ্রহণকারীরা এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন ও নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করতে এবং আগত বিশ্বের নামকরা বিজ্ঞানী ও গবেষকদের থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করতে সক্ষম হবেন বলে আশাপ্রকাশ করেন ড. ফেরদৌসী কাদরী।

আইসিডিডিআরবির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অধ্যাপক জন ডি ক্লেমেন্স বলেন, ১৯৬০ সালে কলেরা রিসার্চ ল্যাবরেটরি হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে কালক্রমে আইসিডিডিআরবি একটি বিশ্ব বিখ্যাত জনস্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং এটি প্রতিনিয়ত বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান ও জীবন রক্ষায় অবদান রেখে এসেছে।

অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ-এর প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক নির্মল কে গাঙ্গুলি অ্যাসকড-এর পটভূমি সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব গোথেনবার্গ-এর অধ্যাপক ইয়ান হোম গ্রেন এবং বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.আবুল কালাম আজাদ বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীরা আন্ত্রিক রোগ মোকাবেলার উদ্দেশ্যে নতুন গবেষণা উপস্থাপন করবেন, বিজ্ঞানভিত্তিক সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন করবেন এবং একটি সুস্পষ্ট আলোচ্যসূচি প্রণয়ন করবেন। আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে থাকবে রোগের বৈশ্বিক ব্যাপকতা; অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধী হয়ে ওঠা; রোগনির্ণয় ও নজরদারি ব্যবস্থার জন্য সর্বোত্তম অনুশীলন; পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থা-সংক্রান্ত অভ্যাস এবং কলেরা ও নতুন টাইফয়েড কনজুগেইট টিকার উৎপাদনে অগ্রগতিসহ রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত কৌশল।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্গত স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

১৯৮১ সালে যখন ডায়রিয়া শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং মুখে খাওয়ার স্যালাইনের কার্যকারিতা দেখা যায় তখন প্রথমবারের মতো এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং তখন থেকেই অ্যাসকড এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইন।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অব পাবলিক হেলথ, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবিন ভ্যাক্সিন ইনস্টিটিউট, যুক্তরাষ্ট্রের ফোগার্টি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ, সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব গেটেনবার্গ, যুক্তরাজ্যের ওয়েলকাম ট্রাস্ট স্যাংগার ইনস্টিটিউট ইন ক্যামব্রিজ, কেনিয়ার কেনিয়া মেডিকেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট (কেইএমআরআই), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, যুক্তরাষ্ট্রের ইউ.এস. ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেইটস ফাউন্ডেশন (বিএমজিএফ), বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) , বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং সকল স্পন্সরের প্রতিনিধিসহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহের বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, চিকিৎসক, মেডিকেল শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করেছেন।

অ্যাসকড সম্মেলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর