Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বেতন ৩ হাজার, মাস্টার রোলে পার ২৭ বছর!


২৯ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:৪৯

রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে (মাস্টার রোল) চাকরি করছেন প্রায় ২৮০ জন কর্মচারী। এদের মধ্যে কেউ ২০ বছর, কেউবা ২৬, আবার কারও ২৭ বছর পার হয়ে গেছে; কিন্তু মাস্টার রোলের ট্যাগ থেকে তারা বের হতে পারেননি। তবুও স্থায়ী কর্মচারীর মতো দাফতরিক কাজ করছেন তারা। বলতে অবাক করার মতো হলেও এদের প্রত্যেকের বেতন মাত্র তিন হাজার টাকা।

এই যুগে তিন হাজার টাকা বেতনের চাকরি করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন রাবির এই ২৮০ কর্মচারী। চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বার বার অনুরোধ জানালেও বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। এমনকি একই অফিসে নতুন স্থায়ী নিয়োগ পাওয়ার খবরে কারও স্ট্রোকে মারা যাওয়ার খবরও আছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিন্ডিকেট সদস্যের পা ধরেও এক কর্মচারীকে নিয়োগ স্থায়ীর দাবি জানাতেও দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি মাস্টার রোল কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এম আব্দুস সোবহান বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন। পরিষদের মুখপাত্র শহীদ হবিবুর রহমান হলের কর্মচারী মাসুদুর রহমান বলেন, ‘১৯৯৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ২৮০ জন কর্মচারী দক্ষতার সাথে কাজ করে আসছি। এই দীর্ঘ সময়ে প্রায় সবাই অন্য চাকরিতে আবেদনের যোগ্যতাও হারিয়েছেন। দৈনন্দিন জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। ভিটেমাটি হারিয়ে ঋণগ্রস্থ হয়েছেন অনেকেই।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ৪৯৭তম সিন্ডিকেটে উত্থাপন হলেও নিয়োগের বিষয়টি অমিমাংসিত রয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিন্ডিকেট সদস্য হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘৪৯৭তম সিন্ডিকেট সভায় দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করা কর্মচারীদের নিয়োগ স্থায়ীকরণের বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। সমস্যা হলো, এই বিশাল সংখ্যক কর্মচারীকে একসঙ্গে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ এর জন্য প্রয়োজন বড় অঙ্কের বাজেট। তারপরও তাদের সবার নিয়োগ স্থায়ীর ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। এবং সেটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই হবে বলে আলোচনা হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

তবে কর্মচারীদের অভিযোগ, ১০ বছর আগে অস্থায়ীদের স্থায়ীকরার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের একটি নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা উপেক্ষা করেছে প্রশাসন। নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে অ্যাডহক নিয়োগ চলছেই। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতরে কম্পিউটার অপারেটর, শাহ মখদুম হলে পিওন, মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকসহ বিভিন্ন বিভাগে অ্যাডহক নিয়োগ থেমে নেই। সম্প্রতি এভাবে প্রায় ১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়ার তথ্য আছে। এছাড়া ৪৯৬তম সিন্ডিকেট সভায় আরও ১৬ জনের চাকরি স্থায়ী করা হয়।

২০০৮ সালের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপ-সচিব মো. রইছ উদ্দিন স্বাক্ষরিত একটি নির্দেশনার সিদ্ধান্ত থেকে জানা যায়, ভবিষ্যতে স্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে মাস্টার রোলের (দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে) কর্মচারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে বাজেটের জন্য একটি আবেদনপত্র পাঠাতে হবে।

এরপরও রাবি কর্তৃপক্ষ নিয়োগ স্থায়ী করেনি। এছাড়া বাজেটের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হয়েছে কি-না সে ব্যাপারেও কিছু জানাতে পারেনি উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা।

মাস্টার রোলের ২৮০ জন কর্মচারীর নিয়োগ স্থায়ীকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে আনন্দ কুমার সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সত্যিই মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। তবে একসঙ্গে এত কর্মচারীর নিয়োগ স্থায়ী করা যাচ্ছে না।’

কিন্তু ১০ থেকে ২০ জন করে পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেওয়া গেলে তাদের সংখ্যাটা কমতে শুরু করবে- সে বিষয়ে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

কর্মচারী তিন হাজার বেতন মাস্টার রোল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর