সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ, সংসদে প্রধানমন্ত্রী
২৯ জানুয়ারি ২০২০ ২০:৪১
সংসদ ভবন থেকে: সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশি-বিদেশি নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। সরকার ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিগত ১০ বছরে সর্বক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হয়েছে তার পথ ধরে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘টেকসই অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের উন্নয়ন ভাবনা ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ৪২ বছর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিডিসি) তালিকায় থাকার পর ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার স্বীকৃতি পেয়েছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এ উত্তরণ, যেখানে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস।’
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের দুঃশাসনের কথা তুলে ধরে সংসদ নেতা বলেন, ‘একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে দেশের এ অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আবার দুর্নীতির চক্রে নিপতিত হয় দেশ। হাওয়া ভবনের নামে তারেক জিয়া চালাতে থাকে লুটপাট। দুর্নীতিতে বাংলাদেশ শীর্ষে অবস্থান করে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন সূচকের প্রায় সবগুলোতে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে থাকে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। বিগত ১১ বছরে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজিএস) অর্জনে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্য দক্ষিণ এশিয়াসহ উন্নয়নশীল দেশসমূহের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে সমাদৃত হয়েছে।
সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিপুর সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কেউ বেকার থাকুক আমরা তা চাই না। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-মাদক থেকে যুব সমাজকে মুক্ত করে তাদের সুন্দর জীবন দিতে, বিপথে নয় সঠিক পথে যেন যুব সমাজ চলতে পারে এবং মানুষের মতো মানুষ হয়- সেজন্য সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কারণ যুবসমাজ শক্তি, উদ্যম, উদ্ভাবন আর কর্মপ্রেরণার প্রতীক। এখন যুবকদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী শুধু চাকরির পেছনে ঘুরবে নাকি নিজেরা কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে অন্যকেও চাকরি দেবে? ইচ্ছে করে কেউ বেকার থাকতে চাইলে সেখানে করার কিছু নেই। তবে আমরা এত কর্মসূচি নিয়েছি- সেখানে কারও বেকার থাকার সুযোগ নেই।’
বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে প্রটোকল নিয়ে চলতে হয় এটা ঠিক, কিন্তু দেশের কোনো কিছুর খবর রাখি না এটি ঠিক নয়। দেশের সবদিকেই নজর রেখেই কাজ করছি বলেই দেশের এত উন্নয়ন হয়েছে। আর বেশি কাজ করলেই আবার সমালোচনা করা হয়, প্রধানমন্ত্রী একাই সব কাজ করবেন কেন? কিন্তু দেশের জনগণ আমাকে সুযোগ দিয়েছে বলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী সময়ে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীরা যুব সমাজের হাতে অস্ত্র ও মাদক তুলে দিয়ে বিপথে চালিত করেছিল। জিয়াউর রহমানও মেধাবী শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র-মাদক তুলে দিয়ে বিপথে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা চাই না, যুব সমাজ বিপথে যাক। সন্ত্রাস-মাদক-জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত করে তাদের সুন্দর জীবন দিতে কাজ করে যাচ্ছি। বিপথে নয়, যুব সমাজকে সঠিক পথে এনে মানুষের মতো মানুষ করতেই আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
বিরোধীদল জাতীয় পার্টির সদস্য মো. ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জননিরাপত্তা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। দুর্নীতি, মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের অভিলক্ষ্য হলো- নিরাপদ জীবন ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গঠন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূলে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান, দেশের আইন-শৃঙ্খলা ও নাগরিক অধিকার, চোরাচালান দমন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা প্রদান, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সাইবার ক্রাইম দমনে পুলিশ বাহিনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অপরাধী শনাক্ত ও তাদের আইনের আওতায় আনার কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধারা গর্ব করে মুখ ফুটে বলতে পারতেন না- আমরা মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু সে অবস্থা এখন আর নেই। এখন মুক্তিযোদ্ধা গর্ব ভরে বলতে পারেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের যে মর্যাদা দিয়েছি, সেখানে আর পদক দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বরং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মুজিববর্ষে আমার আহ্বান, আপনারা নিজ নিজ এলাকায় নতুন প্রজন্ম ও যুব সমাজকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান, যাতে তারা দৃঢ়চেতা নিয়ে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।’
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (রাঙ্গা) এখনও পেছনে পড়ে আছেন। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা অনেক আগে থেকেই অভিযান শুরু করেছি, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। কারণ মাদক একটি পরিবারকে ধ্বংস করে, দেশেরও ক্ষতি হয়। তাই অভিযানের পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রত্যেকটি পরিবারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি, যেন তারা লক্ষ্য রাখেন কোনো যুবক সমাজ মাদক থেকে দূরে থাকে।’