বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রশংসা, সমর্থনের প্রতিশ্রুতি বিশ্বব্যাংকের
৩০ জানুয়ারি ২০২০ ০০:৫৫
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টভিগ শেফার। তিনি জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আরও উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক সবসময় সমর্থন দিয়ে যাবে।
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাতে এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন হার্টভিগ শেফার। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাতে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন তিনি। সাক্ষাৎ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের অবহিত করেন।
শেফার বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ অতি দরিদ্র থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রশংসা করেন তিনি।
একইসঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার জানিয়ে শেফার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের জন্য আরও অর্থায়ন করতে সক্ষম হব।’
বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের জন্য দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার গুরুত্বারোপ করেন। এ ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের মধ্যে ‘উইন-উইন’ অবস্থা বজায় রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। তিনি স্বাস্থ্যখাতের ব্যাপক উন্নয়ন, বিশেষ করে শিশু ও মাতৃমুত্যু হার হ্রাস ও বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নেরও প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশ সফরে শেফার ঘোড়াশাল নদীবন্দর পরিদর্শন করেছেন। তিনি যোগাযোগে বিশেষ করে রেলপথের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নিজে গ্রাম থেকে এসেছেন উল্লেখ করে পল্লী উন্নয়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার পরিকল্পিতভাবে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন, বিশেষ করে গ্রামের উন্নয়ন সরকারের অন্যতম মূল লক্ষ্য।
দেশের উন্নয়নে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সড়ক ও রেল পথের পাশাপাশি নদী পথে যাতায়াতকে গুরুত্ব দিয়েছি। কেননা এটি কম খরচে যোগাযোগের মাধ্যম। এসময় সরকারের ‘বিবিআইএন’ ও ‘বিসিআইএম’ উদ্যোগে যুক্ত থাকার কথা তুলে ধরেন তিনি। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে কানেকটিভিটি জোরদার হবে বলে মত দেন তিনি।
‘বিবিআইএন’-এর প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালকে ট্রানজিট দিতে সম্মত হয়েছে ভারত। এছাড়া সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। কারণ ভারত, নেপাল ও ভুটানের অবস্থান বাংলাদেশের খুব কাছাকাছি। আমাদের এসব নিকট প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ প্রয়োজন।
আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্ভব বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দলকে অবহিত করেন শেখ হাসিনা। এছাড়া কর্মসংস্থান তৈরির জন্য সারাদেশে একশটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগের কথাও জানান তিনি।
নারী ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা নারী ক্ষমতায়ন করতে বাধার মুখে পড়েছি। কিন্তু সব বাধা অতিক্রম করে আজ দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীরা গর্বের সঙ্গে কাজ করছে। বিশেষ করে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশেও (বিজিবি) নারীদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে। এর বাইরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও শতকরা ৫০ শতাংশ পদ নারীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মনোয়ার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। বাসস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ বিশ্বব্যাংক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টভিগ শেফার