‘চাকরি না নিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে হবে’
৩০ জানুয়ারি ২০২০ ১৩:১৩
ঢাকা: তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি, সেটা আমরা বিশ্বাস করি। তাই দেশের তারুণদের চাকরি না নিয়ে চাকরি দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (৩০জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর তেঁজগাওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সফল আত্মকর্মী ও যুব সংগঠকদের মাঝে জাতীয় যুব পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২৭ জন সফল আত্মকর্মী ও সংগঠকের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এ সময় তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য, সারাদেশে এই মুজিববর্ষে কেউ যেন বেকার না থাকে। তরুণরা নিজেদের চিন্তা-চেতনা, কর্মশক্তি ও দক্ষতা দিয়ে নিজে কাজ করার পাশাপাশি আরও দশজনকে কাজ করবার সুযোগ করে দিতে পারে। তাই চাকরি না করে চাকরি দিতে পারব, সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি যুব সমাজকে চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছি। সেইসঙ্গে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমি খুব আনন্দিত। কারণ কয়েকজন নিজে থেকেই উদ্যোক্তা হয়ে সাফল্য অর্জন করেছেন এবং আমরা তাদের পুরস্কৃত করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধুমাত্র চাকরির দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না। চাকরি না করে চাকরি দেব; মানে দেওয়ার সক্ষমতা অর্জনের চিন্তাটা মাথায় থাকতে হবে, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ থাকতে হবে। সেটা থাকলে আমার তো মনে হয়, বাংলাদেশে কেউ আর বেকার থাকবে না।’
আগামী দিনে দেশের যুবসমাজের ভবিষ্যৎ গড়বার লক্ষ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে মানুষের আবার একটা চিন্তা আছে, সেটা হলো- চাকরি না করলেই বেকার। ঘটনা কিন্তু তা না। এখন আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। সমস্ত জায়গায় এখন ইন্টারনেট সার্ভিস আছে। অনেক ফ্রিলান্স্যার আছে।
চাকরি নিয়ে দেশের মানুষের মানসিকতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একটা মজার ঘটনা বলি, একজনের বিয়ের একটা কথা হচ্ছে। তখন মেয়েপক্ষ জিজ্ঞেস করছে, ছেলে কি করে? উত্তরে ছেলেপক্ষ জানায়, ফিলান্স্যার। এটা তো চাকরি হলো না। ছেলে বলে, আমি তো মাসে দুই তিন লাখ টাকা আয় করি। মেয়েপক্ষ বলে, এটাতো চাকরি হলো না- এই মানসিকতা বদলাতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা শুধু বিয়ের পাত্রকেই মুখোমুখি হতে হয়েছে, তা কিন্তু নয়। এক বাবা গেছে তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করাতে। স্কুলে জিজ্ঞেস করছে, ছেলেকে যে ভর্তি করাবেন আপনার ইনকামটা কি? বলে, আমি ফিল্যান্সার। সেটা আবার কী জিনিস। আমি তো ফ্রিল্যান্সিং করে তিন চার লাখ টাকা ইনকাম করছি। আমার মেয়ের বেতন দিতে পারব। আপনি ভর্তি করবেন না কেন? উত্তরে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, এটা তো চাকরি হলো না।‘
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের মাথার মধ্যে ঢুকে আছে, চাকরি ছাড়া যেন আর কিছুই করা যায় না। অথচ আমরা কিন্তু ট্রেনিং দিচ্ছি। লার্নিং-আর্নিংয়ের পাশাপাশি ভাষা শিক্ষাও দেওয়া হচ্ছে; যেন অনলাইনে কাজ করতে পারে। এছাড়া ডিজিটাল সেন্টার যখন দিয়েছি। সেখানে একজন পুরুষ ও একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছে।’
এ সময় তিনি যুব উন্নয়ন অধিদফতরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া প্রশিক্ষণের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তার সরকারের মেয়াদে বেকার যুবসমাজকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য বিনা জামানতে ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বহুমুখী সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। এই সুযোগের সদ্বব্যবহার করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সব সময় এটিই চিন্তা করতে হবে। আগে দেখতে হবে, আমি নিজে কী করতে পারি। নিজে কতটুকু কাজ করতে পারি বা নিজে মানুষকে কিছু দিতে পারি কি না, সেটাই বড় কথা। আমি চাকরি করব কেন, আমি আরও দশটা চাকরি দেব। এই চিন্তাভাবনা থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে ডেল্টা প্ল্যানসহ দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আর এই তরুণ সমাজই হবে দেশের কর্ণধার। যারা এই দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আখতার হোসেন, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান কবির।