দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা
৩০ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:১৮
বাংলাদেশী ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বট বৃক্ষের মত ছায়া দানকারি একমাত্র সংগঠন হল বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ইন কোরিয়া। এই সংগঠনটি বছরে কয়েকটি জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও ২৫ এবং ২৬শে জানুয়ারি হয়ে গেল “শীতকালীন মিলনমেলা ২০২০” কোরিয়ার হ্যারিটেজ খ্যাত বিখ্যাত শহর জঞ্জুতে।
এইবারের পুরো অনুষ্ঠানটি কয়েকটি অংশে ভাগ হয়ে সফলভাবে ২ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন চোনবুক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমন্যাসিয়ামে মধ্যাহ্ন ভোজের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। বিকালে চোনবুক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ভবনের বিশাল অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ এবং কোরিয়ার জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান কার্যক্রম শুরু হয়। চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী এবারের অনুষ্ঠানেও কোরিয়ায় অধ্যায়নরত প্রায় একশো পঞ্চাশ জন বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী এই শীতকালীন মিলনমেলায় অংশ গ্রহণ করে। এইবারের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন তাহমিনা তাসনীম নাহার এবং মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন ভূঁইয়ার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএসএকের ইটিআরটি সদস্য মিনারুল ইসলাম।
এরপরে বিএসএকের সার্বিক কার্যক্রম উপাস্থপন করেন নির্বাহী সদস্য তাহমিনা বিলকিস। এইবারের মিলনমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চোনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডেপুটি ভাইস প্রসিডেন্ট প্রফেসর শীম জেউ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব রোকনুজ্জামান, মাননীয় উপ সচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ড. নুর আলম এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর কিয়ংদোং বিশ্ববিদ্যালয়, এবং জনাব ডেলা কোয়ারমি , প্রেসিডেন্ট অব ঘানাইয়ান স্টুডেন্টস ইন কোরিয়া (ঘাসকার)। এছাড়া ও উপস্থিত ছিলেন কোরিয়া- বাংলাদেশে চেম্বার এন্ড কমার্স (কেবিসিসি) এর চেয়ারম্যান জনাব কিয়ংইন ওহ, প্রাইম ট্রাভেলের সিইও জনাব আবু বক্কর সিদ্দিক রানা,
বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট (বিসিকে) জনাব এম জামান সজল, টিকন সিস্টেমের সিইও জনাব এম এন ইসলাম, বিসিকের সাবেক প্রেসিডেন্ট জনাব হাবিল উদ্দিন।
এছাড়াও কোরিয়া এবং বাংলাদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সপরিবারে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি নতুনদের বরন এবং ডিগ্রি প্রাপ্তদের হাতে সংবর্ধনা ক্রেষ্ট তুলে দেন। নবীনদের পক্ষে জেসমিন আক্তার এবং ডিগ্রীপ্রাপ্তদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন শামসুদ্দিন আহমেদ, ছোচান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত। বিদায়ী ইটিআরটি সদস্যদের পক্ষে স্মৃতিচারণ করেন মিলন চৌধুরী। বাংলাদেশী গবেষকদের পক্ষ থেকে বিএসএকে নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন ড. মোহাম্মদ শামসুদ্দিন আহমেদ। সাবেক ইটিআরটি সদস্যদের পক্ষে বক্তব্য রাখে জনবুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডিতে অধ্যয়নরত মো: আফজাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে বিএসএকে’র পক্ষে সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিএসএকের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য জনাব মো: গোলাম রাব্বানী। এইবারের অনুষ্ঠানে বক্তৃতা, কবিতা, নাচ গানের মধ্যে দিয়ে কালচারাল পর্ব শেষ হয়।
এরপর একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমন্যাসিয়ামে জঞ্জুর বিখ্যাত হরিণের মাংস দিয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করা হয় । তারপর শুরু হয় বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ইনডোর গেমস। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বালিশ খেলা, সূচসুতো, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, দৌড় প্রতিযোগিতা, কিছু আঞ্চলিক নাচ-গানের মধ্যে দিয়ে ইনডোর গেমস শেষ হয়। সকালের নাস্তা দিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে জঞ্জুর বিখ্যাত জুয়েলারি জাদুঘর পরিদর্শন করা হয় । জাদুঘর পরিদর্শনের পর চোনবুক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ষ্টেডিয়ামের ভি ভি আই পি গ্যালারিতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী চিকেন বিরিয়ানি দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ করা হয়। মধ্যাহ্ন ভোজের পর ইনডোর গেমসে অংশ গ্রহণকারি বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বিকালে সবাই এক সাথে জঞ্জুর বিখ্যাত হানুক ভিলেজ পরিদর্শনের মধ্যে দিয়ে এইবারের অনুষ্ঠানে কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
এইবারের অনুষ্ঠানে কার্যক্রম একটু ব্যতিক্রম ছিল। রাতে থাকার জন্য ছিল জঞ্জু শহরের প্রান কেন্দ্রে অবস্থিত গবুক মোটেল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ছিল চোনবুক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল অডিটোরিয়াম। খাওয়া এবং ইনডোর গেমসের জন্য ছিল একই বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমন্যাসিয়াম এবং ষ্টেডিয়াম। খাবার প্রস্তুতি এবং রান্নার জন্য ছিল জঞ্জু মসজিদের রান্না ঘর। এইবারের মিলনমেলা সময় কোরিয়ার বড় ছুটি সল্লাল হওয়াতে সব আয়োজন এক জায়গায় করা সম্ভব হয় নি। এতে করে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তারপরও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের বেশির ভাগই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন অনুষ্ঠান আয়োজকদের প্রতি। “এত প্রতিকূলতার মধ্যেও এত বড় অনুষ্ঠান সফল ভাবে সমাপ্ত কি করে সম্ভব!”
বিএসএকের সদস্য যারা রান্নার দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা অনুষ্ঠানে আগতদের জন্য বাংলাদেশী ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করার জন্য রাতের ঘুম বাদ দিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেন। অনেকেই তাঁদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতার প্রকাশ করেন। অনেকেই বলেন “এত লোকের খাবার আয়োজন করা কত যে কষ্টকর এক মাএ যারা করে তাঁরাই বুঝতে পারেন”। পরিশেষে সবাই বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনকে ধন্যবাদ দিয়ে সবাই যার যার নীড়ে ফিরে যায় ।