Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ব্রহ্মপুত্র দিয়ে ভারত থেকে ভেসে আসছে মৃত গরু


৩০ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:৫০

কুড়িগ্রাম: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরুর প্রতি অমানবিক আচরণ কোনোভাবেই কমছে না। দু’দেশের সীমান্তে নজরদারি বাড়ায় চোরাকারবারীরা গরু পাচারে বেছে নিয়েছেন ভিন্ন কৌশল। তারা রাতের অন্ধকার আর ঘন কুয়াশাকে কাজে লাগিয়ে কলা গাছ অথবা কাশের ভেলার সঙ্গে ৮/১০টি করে গরুর পা বেঁধে একত্রে ভাসিয়ে দিচ্ছেন ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে। এতে করে গত এক মাস ধরে সীমান্তের ওপার থেকে ভেসে আসার সময় মারা যায় শত শত গরু।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রারপুর ইউনিয়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের ডুবো চরে একের পর এক ভেসে আসছে ‍মৃত গরু। বেশি লাভের আশায় ভারতীয় চোরাকারবারীরা ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশ মুখ ভারতের কালাইয়ের চরের উজান থেকে বাংলাদেশি চোরাকারবারীদের কাছে স্রোতে ভাসিয়ে দেয় এসব গরু। রাতের অন্ধকার এবং ঘন কুয়াশায় দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব গরু ঢোকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। কিছু গরু এদেশের চোরাকারবারীরা উদ্ধার করলেও অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আর পানিতে ডুবে মারা পড়ছে অসংখ্য গরু। এসব মৃত গরু আটকা পড়ছে ব্রহ্মপুত্রর বিভিন্ন ডুবো চরে।

কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর, চিরা খাওয়া, ঝুনকার চর, অষ্টআশির চর, রলাকাটার চরসহ বেশকিছু চরে ঘুরে দেখা গেছে, নদের দুই পাড়ের এসব ডুবো চরের কোনটিতে ৪০টি, কোনটিতে ২০টি, কোনটিতে ১০টি কোনটিতে ১৫টি মৃত গরু পড়ে আছে। এসব গরুর কোনো কোনটির চামড়া নিয়ে গেছে স্থানীয় মুচিরা।

চর যাত্রাপুরের নৌকার মাঝি মো. কোবাদ মোল্লা জানান, চর যাত্রাপুরের ডুবো চরে গত চার/পাঁচ দিনে মৃত ৯টি গরু আটকা পড়েছে। উজানের চরগুলোতে আরো অসংখ্য মৃত গরু আটকে আছে।

একই এলাকার নৌকার আরেক মাঝি মো. শাহ আলম মিয়া জানান, আগে কাঁটাতারের ওপর দিয়ে চাঙ্গে করে গরু পাচার হয়ে আসতো। এখন কড়া পাহারা ও বিএসএফ গুলির ভয়ে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতের উজান থেকে গরুর পা বেঁধে স্রোতে ছেড়ে দিয়ে গরু পাচার করছে চোরাকারবারীরা। এসব গরুর যেগুলো বাংলাদেশের চোরাকারবারীরা ধরতে পারছে সেগুলো বেঁচে যাচ্ছে। আর যেগুলো ধরতে পারছে না সেগুলো পানিতে ডুবে বা ঠাণ্ডায় মারা যাচ্ছে। সেই মৃত গরুগুলোই স্রোতে ভেসে এসে ডুবোচরে আটকা পড়ছে।


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের ১০/১২টি ডুবোচরে অসংখ্য মৃত গরু আটকা পড়ে আছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এমন অমানবিক ভাবে গরুর পা বেঁধে নদীর স্রোতে ভাসিয়ে গরুপাচার রোধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি মৃত গরুগুলো অপসারণ করে পরিবেশ রক্ষারও দাবি জানান তিনি।

কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবি’র পরিচালক মোহাম্মদ জামাল হোসেন বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “দু’দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কড়া নজর দারীর মাঝেও নদী পথে ভিন্ন কৌশলে দু’দেশের চোরাকারবারীরা গরু পাচার করায় অনেক গরু মারা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা সচেতন রয়েছি।”

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, এমন নির্দয় ভাবে পাচার এবং গরুর মৃত্যুর ঘটনাটি শুনেছি। এ ব্যাপারে গরু পাচার রোধের পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গরু পাচার ভারত-বাংলাদেশ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর