করোনাভাইরাস ঠেকাতে মাঠে নেমেছে চীনের সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান
৩০ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:৫৭
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনে এ পর্যন্ত প্রাণ গিয়েছে ১৭০ জনের। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এ ভাইরাসটি দেশের প্রতিটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এ ভাইরাস ঠেকাতে চীন ইতিমধ্যে বিশাল প্রতিরোধ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। দ্রুত হাসপাতাল নির্মাণসহ দেশব্যাপী জরুরী স্বাস্থ্য সেবা চালু করেছে সরকার।
এদিকে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশেষজ্ঞরা শুরু করেছেন গবেষণা কার্যক্রম। চীনে এ ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে চলছে বিশেষ গবেষণা।
করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে এসব কর্মকান্ডে এগিয়ে এসেছে চীনের বিভিন্ন প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান। কেউ গবেষণার কাজে বিশাল অংকের অর্থ সহায়তা দিচ্ছে, আবার কেউ কেউ তাদের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চিকিৎসাসেবায় সহায়তা করছে।
চীনের বিখ্যাত পরিবহন বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান দিদি টেকনোলজি বিভিন্ন শহরে চিকিৎসাকর্মীদের যাতায়াতে সহায়তা করছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের কোনো ভাড়া ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে টেনসেন্ট হোল্ডিংস এর আওতাধীন জনপ্রিয় চ্যাটিং অ্যাপ ‘উইচ্যাট’ তাদের এক বিশেষ ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের জানিয়ে দিচ্ছে নিকটস্থ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের অবস্থান।
এদিকে চীনের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলিবাবা’র মালিক ও চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি জ্যাক মা ভাইরাসটির ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গবেষণা কাজে ১ কোটি ৪৫ লাখ মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া আলিবাবার বিভিন্ন প্রযুক্তি কাজে লাগানো হচ্ছে আক্রান্তদের সহায়তায়। আলিবাবার ক্লাউডভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের গবেষণায়ও সহায়তা করা হচ্ছে গবেষকদের।
এছাড়া এতদিন যেসব প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করে বিশাল তথ্যভান্ডার তৈরি করেছে, তা এবার জাতীয় প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তিতে এসব তথ্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
চীনে বহুল ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন ‘বাইদো’। এ সার্চ ইঞ্জিনটি এতদিন ধরে গ্রাহকদের কাছ থেকে যেসব তথ্য সংগ্রহ করেছে তা দিয়ে নিখুঁতভাবে আক্রান্তদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে চীনের শহরগুলোর কোন কোন জায়গায় ভীড় তৈরি হচ্ছে তা জানতে পারছে সরকারি কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুরে গ্রেব ও গোজেক নামের দুটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান ঠিক একইভাবে তাদের সংগ্রহে থাকা তথ্য দিয়ে নাগরিকদের চলাফেরার একটি চিত্র দিয়ে সাহায্য করছে দেশটির সরকারি কর্তৃপক্ষকে।
বৃহস্পতিবার ‘বাইদো’ তাদের এক বার্তায় জানায়, প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছে যা ভাইরাস নিয়ে গবেষণায় গবেষকদের ১ ঘণ্টার কাজ মাত্র দেড় মিনিটে সেরে দিতে পারছে। প্রযুক্তি দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি মহামারি গবেষণায় আরও ৩ কোটি ইয়েন অর্থ সহায়তা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে ‘বাইদো’ ও ‘আলিবাবা’ দেশজুড়ে একটি রোবটভিত্তিক চ্যাট পরিষেবা চালু করেছে যা বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাইরাস বিষয়ক প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে। এ প্রযুক্তি বাসিন্দাদের দেওয়া জবাব থেকে পাওয়া স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যভাণ্ডারও তৈরি করছে।
এছাড়া সাংহাইয়ের একটি চিকিৎসাবিষয়ক রোবট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের রোবট দিয়ে হাসপাতালগুলোকে সহায়তা করছে। এসব রোবট হাসপাতালগুলোকে জীবাণুমুক্ত করতে বিশেষভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। এছাড়া রোগীর প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে সক্ষম এসব রোবট।
টিমিরোবের প্রধান নির্বাহী মা জিয়াইয়ি এ ব্যাপারে বলেন, অনেক নার্স সংক্রমিত হওয়ার আশংকায় রোগীর কাছে যেতে ভয় পান। এসব রোবট রোগীর কাছে গিয়ে স্বাস্থ্য তথ্য সংগ্রহ করে। এছাড়া এসব রোবট হাসপাতালকে জীবাণুমুক্ত করতে কাজ করে। খবর নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ।