সংসদে সরকারি দলের তোপের মুখে বিএনপির এমপি হারুণ
৩০ জানুয়ারি ২০২০ ২০:২৭
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: ওয়াজ মাহফিলে বাধা দেওয়ার বিষয়ে সংসদে ভুল তথ্য দেওয়ায় সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানের রাহিমের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে, অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্তের চেষ্টা করেছেন। এটি উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত এবং তাদের চিরাচরিত একই রাজনীতি, জামাতি রাজনীতি।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এভাবে তোপের মুখে পড়েন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে সভাপতিত্ব করেন।
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যের বক্তব্যের কড়া জবাব দেন সাবেক প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ ও বর্তমান হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।
হারুনুর রশীদ বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি সংশোধিত সংবিধানের পূর্বে সর্বশক্তিমান আল্লাহ প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসী হবে এবং যাবতীয় কাজের ভিত্তি এটিই হবে। তবে নতুন সংশোধিত সংবিধান থেকে এটা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম হিসেবে রাখা হয়েছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় পূর্বের বিষয়টি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, সেটির পরিবর্তে সংযোজিত হয়েছে দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে, পরম করুনাময় সৃষ্টিকর্তার নামে। বিষয়টিতে আপত্তি করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমের প্রকৃত অর্থ সংযোজিত হওয়া উচিত। এসময় তিনি বলেন, কয়েক দিন ধরে সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় একটা বিষয় নিয়ে বির্তক করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন তাফসির মাহফিলে যে আলোচনা হচ্ছে, কোরআন হাদিসের আলোকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন তাফসিরগণ আলোচনা করছেন। সেই সমস্থ আলোচনা নিয়ে আপত্তিজনক অসংলগ্নজনক কথা বার্তা বলা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টানরা তারা তাদের সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা তাদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আমার যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী তাফসির মাহফিল করতে গেলে নিষেধাজ্ঞা আসছে, আপত্তি আসছে। যে সমস্ত বিষয়ে আপত্তি আসছে সেটা আমাদের মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে।’
এসময় সরকারি দলের সদস্যরা হৈ চৈ করতে থাকেন। হারুন বলেন, ‘যত আপত্তি করবেন আপনাদের বিপক্ষে যাবে। দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলাম।’
তার বক্তব্যের জবাব দিয়ে সাবেক প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, ‘আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাইকে সমানভাবে সুযোগ দিয়ে থাকি। দেশের সব জায়গায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে, সেখানে আল্লাহ রসুলের কথা বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র জামাতি পন্থায় মানুষ যাতে শিক্ষা দিক্ষা না নেয় যাতে দেশটাকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত না করে সেই দিকটাকে আমরা অনেক সময় বলে থাকি এটা যেন না হয়। কিন্তু ইসলামের কার্যকলাপে কোনো বাধা সৃষ্টি হচ্ছে না।’
ফিরোজ বলেন, ‘ওনি (হারুনুর রশিদ) জামাতপন্থীদের কথা মতো এখানে কিছু কথা উত্থাপন করেছেন। এটা আসলে দেশের ১৬ কোটি মানুষ এটার বিরোধীতা করে, মুষ্টিমেয় কয়েক জন মানুষ এর পক্ষে। সারাবিশ্বে ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে রূপান্তিরিত করতে চাই না। আমরা চাই সত্যিকারের ইসলাম নবী রাসুলের ইসলাম যাতে কার্যকর হয়। সেই ব্যবস্থা করে যাচ্ছি। ইসলাম আছে, ইসলাম থাকবে, বাংলাদেশে চিরদিন মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করে চলতে পারব। আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ওনি (হারুন) সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে আগের মতো ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিসমিল্লাহ রাহমানির রাহিমের ব্যাখ্যা হিসেবে অপব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এটি একটি উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং ওই যে তাদের চিরাচরিত একই রাজনীতি, যে ধানের শীষে ভোট দিলে বেহেস্তের টিকিট পাওয়া যাবে, নৌকায় ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না বৌ তালাক হয়ে যাবে। কোরআন হাদিসের কোনো ব্যাখ্যায় কবে এই শব্দ বা বাক্য নাজিল হয়ছে এই ব্যাখ্যা দিতে পারবেন না হারুন।’
ফিরোজ বলেন, ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুর পর কোনো হাদিস এই পৃথবীতে আসে নাই। যে বিএনপি ১৯৭৮ সালে সৃষ্টি হল, সেই বিএনপি ধারেন শীষে ভোট দিলে বেহেস্তের টিকিট পাওয়া যায় এমন কোনো হাদিস রাসুল দেন নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসলে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য ওনি হঠাৎ করে এমন একটি পয়েন্ট উত্থাপন করলেন। যার সঙ্গে সংসদের কার্যক্রমের কোনো সম্পর্ক নেই। সারাদেশে ইছালে সাওয়াব, তাফসির মাহফিল হচ্ছে এটা আমাদের দেশে ঐতিহ্য।’
তিনি বলেন, আমরা ওরশে বোমা হামলা করতে দেইনি। আমরা হযরত শাহজালালের মাজারে বোমা হামলা করতে দেই নাই। আমরা ইসলামকে রক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ইসলামের নামে, ধর্মের নামে যারা বিভিন্ন ফতোয়া দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্য এবং গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে কথা বলছেন। যারা প্রকৃত তাফসির মাহফিল করছেন ওরশ করছেন যারা বিভিন্ন জলশা করছেন তাদের রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।’