Tuesday 08 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে বাড়ছে নারীদের মৌসুমি কর্মসংস্থান


৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০৮:৫৮ | আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২০ ০৯:৪১
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিরাজগঞ্জ: চলনবিল অঞ্চলের পাঁচ জেলার ১২ উপজেলার হাজার নারী শ্রমিক ব্যস্ত সময় পার করছেন শুঁটকি তৈরিতে। এই অঞ্চলের নারীদের মৌসুমি কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে এ অঞ্চলের শুঁটকি খাত। তবে শ্রমিকদের অভিযোগ, সারাদিন বিরামহীন খেটেও পারিশ্রমিক পান সামান্যই!

সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর, বগুড়া ও রাজশাহী অঞ্চলে দেশীয় শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। ভোর থেকে শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। মাছে লবণ মাখানো, ওজন করা, বহন করে মাচায় নেওয়া, উল্টেপাল্টে দেওয়া, বাছাই করাসহ আরও কতো কাজ! আর সব কাজই করেন নারীরা।

শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সিংড়া উপজেলা। সিংড়া সেতুসংলগ্ন বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের গ্রাম নিঙ্গুইন। চলনবিলের মিঠা পানির মাছের শুঁটকির জন্য বেশ নাম আছে জায়গাটির। মৌসুমে রাস্তার পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে শুঁটকি মাছ তৈরির কারখানা। আশপাশের গ্রামের নারীরাই প্রাণ এ শুঁটকিপল্লীর। চলনবিলের অধিকাংশ মাছ চলে আসে জেলা-উপজেলা সুদূরের আড়ত ও বাজারে। সেখান থেকে পাইকাররা শুঁটকির জন্য কিনে আনেন শত শত মণ মাছ। ভাদ্র থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত চলে শুঁটকির জন্য মাছ সংগ্রহ। বর্ষার পানিতে চলনবিলে যেসব মাছ বেড়ে ওঠে সেসব মাছ ধরা হয় এ সময়।

বিজ্ঞাপন

শুঁটকি ব্যবসায়ী রাশেদুল জানান, এখন মৌসুম প্রায় শেষ। তাই দিনে ১২-১২ মণ মাছ সংগ্রহ করা যায়। মৌসুমে এটা গিয়ে দাঁড়ায় ৩৫-৪০ মণে। সরকারি জায়গা লিজ নিয়ে চালানো এ পল্লীতে এখন কাজ করছেন ৪০ জন নারী। ভরা মৌসুমে এক হাজার নারী কাজ করেন। মাছ ওজন করার পর লবণ মাখানো হয়। এটা মাছ দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে, তাছাড়া মাছ ভালোও রাখে। লবণ মাখানো হলেই সেগুলো মাচায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাছগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রোদে দেওয়া হয়। এ কাজটিও করেন নারীরাই।

এখানে শুঁটকি করা হয় শোল, বোয়াল, রায়েক, খলিসা, পুঁটি, গুঁচি, টেংরা, চান্দা, বাতাসি, কাকিলা, বেলে, মলা, চিংড়ি, টাকি প্রভৃতি মাছ। লিপি, রাশিদা, ইতির মতো নারীরা এখানে কাজ করেন সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। মজুরি সে তুলনায় কমই বলতে হবে। ১১০ টাকা প্রতিদিন। মৌসুমে আরও বেশি সময় থাকতে হয়। শ্রমিক রাশিদা জানান, কাজে অনেক সময় দেওয়া লাগে। তার তুলনায় মজুরি খুব বেশি পান না, যা পান তা দিয়ে সংসার চালানোর ক্ষেত্রে স্বামীকে সহযোগিতা করেন।

তবে শ্রমিকরা নামমাত্র পারিশ্রমিক পেলেও শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বা মহাজনরা ভালোই আয় করছেন। শুঁটকি মহাজন জাকির জানান, পুঁটি মাছ ৪০-৮০ টাকা কেজি কিনে শুঁটকি করে বিক্রি করেন ২৫০-৩৫০ টাকা, রায়েক ৪০-৬০ টাকায় কিনে, বিক্রি ৮০-১৪০ টাকায় বিক্রি করেন। এছাড়া খলিসা ৪০-৪০ টাকায় কিনে বিক্রি ৭০-৮০ টাকায়। বোয়াল কেনা ১০০-১২০, বিক্রি ৫০০-৬০০, শোল ৮০-১০০ টাকায় কিনে বিক্রি ৫০০-৫৫০ টাকায়। চান্দা ৩০-৩৫ টাকা কেনা, বিক্রি ১০০-১২০ টাকায়। মিঠা পানির এ শুঁটকি নাটোর, রংপুর, সৈয়দপুর, নীলফামারী প্রভৃতি এলাকায় যায় বেশি। ঢাকাসহ অন্য জেলাতেও যায়, তবে তা খুব কম।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, শুঁটকি মৌসুমে কাজ করে অনেক নারী অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বছরের ছয় মাস তাদের কাজের অভাব থাকে না। গ্রামীণ অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে তারাও রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ ছয় মাস তাদের মাছ কেনাও লাগে না, মহাজনরাও নিয়মিত খেতে দেন।

চলনবিল মৌসুমি কর্মসংস্থান শুটকি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর