ব্যবসায়ীকে অপহরণ-মুক্তিপণ আদায়: ডিবি’র ৭ সদস্য বরখাস্ত
৩১ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:০৯
ঢাকা: রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার পর ‘ক্রসফায়ারে’র ভয় দেখিয়ে ৪ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগে ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাত সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বরখাস্ত হওয়া সাত জনের মধ্যে একজন উপপরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারি উপপরিদর্শক (এএসআই), একজন ড্রাইভার (কনস্টেবল) ও চার জন কনস্টেবল।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এ ছয় জনের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি।
পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, যার যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি, প্রাথমিক সত্যতার ভিত্তিতে তাদের সাসপেন্ড করেছি। অভিযোগ তদন্ত করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, সোহেল নামে এক ব্যবসায়ী ৩০ জানুয়ারি রাতে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করেন, তাকে অপহরণের পর চার লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের নাজিরাবাগ হাসেম মিয়ার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা ভুক্তভোগী মো. সোহেল অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ২৯ জানুয়ারি আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা সদরঘাট থেকে ব্যবহারের জন্য দুইটি লুঙ্গি কিনে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। পথে সূত্রাপুর থানার লালকুটির নৌকা ঘাটে পৌঁছালে আচমকা পাঁচ/ছয় জন এসে তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলে। তারা গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে হাতকড়া পরিয়ে তাকে নৌকায় তুলে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে নিয়ে যায়।
অভিযোগে বলা হয়, এরপর কেরাণীগঞ্জ আলম মার্কেটের সামনের রাস্তায় নিয়ে নম্বর প্লেটবিহীন সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে তোলা হয় তাকে। এসময় চোখে কালো কাপড় বেঁধে তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে প্লায়ার্স দিয়ে সোহেলের হাতের আঙুল যখম করে এবং লাঠি দিয়ে পেটানো হয় তাকে।
সোহেলের অভিযোগ, একপর্যায় সঙ্গে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র মাথায় ঠেকিয়ে তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন ডিবি পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা। মুক্তিপণের টাকা না দিলে ‘ক্রসফায়ার’ ও মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠানোর হুমকিও দেন তারা। পরে সোহেলের ব্যবহৃত সিম থেকে তার পরিবারের দু’টি মোবাইল নম্বরে কল করে তারা কথা বলেন এবং সোহেলকে দিয়েও তার পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণের টাকা দাবি করান।
সোহেল বলেন, একপর্যায়ে তার পরিবারের সদস্যরা মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি হন। তাদের টাকা নিয়ে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে যেতে বলা হয়। সেখান থেকে আবার যেতে বলা হয় বছিলা ব্রিজে। সেখানেই সোহেলের পরিবারের তিন সদস্যকে সাড়ে চার লাখ টাকাসহ মাইক্রোবাসে তুলে নেওয়া হয়। পরে অজ্ঞাত একটি স্থানে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিভিন্ন কাগজে সোহেলসহ তার পরিবারের সদস্যদের সই নেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী সোহেল বলেন, বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং হুমকি দিয়ে তারা বলে, এ ঘটনা কারও কাছে প্রকাশ করা হলে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হবে। নইলে সবাইকে ধরে নিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলা হবে।