চট্টগ্রামে অগ্নিকাণ্ডের পর বস্তি মালিকদের বাড়িঘরে হামলা
৩১ জানুয়ারি ২০২০ ২০:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: এক সপ্তাহের মাথায় পাশাপাশি দুই বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের পর বস্তি মালিকদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা পরিকল্পিতভাবে আগুন দেওয়ার অভিযোগ তোলার পর এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, বিক্ষুব্ধ লোকজনকে কেউ উসকানি দিয়ে এই হামলা সংঘটিত করেছে কি-না তদন্ত করা হবে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে নগরীর পাঁচলাইশ থানার মির্জাপোল এলাকার ডেকোরেশন গলিতে হুমায়ন কলোনি হিসেবে পরিচিত বস্তিতে আগুন লাগার খবর পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে। পাঁচটি ইউনিটের ১৪টি গাড়ি দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগে আরও কমপক্ষে দুই ঘণ্টা। এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি হুমায়ন কলোনির পাশের বস্তি বাবু কলোনিতে আগুন লেগেছিল। এতে প্রায় ২০০ কাঁচাঘর পুড়ে যায়।
দুই বস্তির মালিক হিসেবে একই পরিবারের বেশ কয়েকজন আছেন যাদের বাড়ি অগ্নিকাণ্ডকবলিত ওই বস্তি থেকে এক কিলোমিটার দূরে শুলকবহর ভরাপুকুর পাড় এলাকায় আব্দুল হামিদ সড়কে। ২৪ জানুয়ারি পুড়ে যাওয়া বাবু কলোনির মালিক আব্দুল হামিদের ছেলে শাহনেওয়াজ বাবু ও সেলিম নেওয়াজের। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পুড়ে যাওয়া আরেক বস্তির মালিক তাদের আরেক ভাই ওসমান নেওয়াজ, তার ছেলে জুয়েল এখন ওই বস্তির দেখাশোনা করেন বলে জানা গেছে।
হামলার বর্ণনা দিয়ে সেলিম নেওয়াজের ছেলে সাব্বির নেওয়াজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে, আমরা সবাই তখন মসজিদে নামাজে ছিলাম, আকস্মিকভাবে ৫০-৬০ জন কিশোর-তরুণ এসে ভাঙচুর শুরু করে। প্রথমে আমার বড় চাচা শাহনেওয়াজ সাহেবের ঘরের সামনে রাখা ২টি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে। এরপর আমাদের ঘরের ভেতরে ঢুকে টেলিভিশন, ফ্রিজ, কম্পিউটার, আলমারি, চেয়ার-টেবিল থেকে শুরু করে হাতের কাছে যা পেয়েছে সব ভাঙচুর করেছে। ৫ থেকে ৭ মিনিটের মধ্যে ভাঙচুর করে তারা চলে গেছে।’
বস্তিতে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে এই হামলা করেছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বস্তিতে আমাদের ঘর ছিল ৩৩টা। একমাস আগে সবগুলো ঘর আমরা রিপেয়ার করে নতুনভাবে তৈরি করেছি। আগুনে তো আমাদের ঘরগুলোও পুড়ে গেছে। তাহলে আমরা আগুন দিতে যাব কেন ?’
এদিকে হামলার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় পাঁচলাইশ থানা পুলিশের টিম। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বস্তির আগুন তখনো পুরোপুরি নেভেনি। এর মধ্যেই বস্তির মালিকদের ৩-৪ টি বাড়িতে হামলা হয়েছে। কারা করেছে এটা আমরা জানি না। তবে আগুনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। কেউ তাদের উসকানি দিয়ে এই হামলা করেছে কি না, সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন জানিয়েছেন, দুই বস্তির মালিকানা নিয়ে বিরোধে মামলা আছে। এর আগেও তাদের বস্তি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা হয়েছিল।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় কুমার বসাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য পাচ্ছি। কেউ বলছেন, আগুন পরিকল্পিতভাবে লাগানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ মামলার বিষয় বলছেন। আমরা সব বিষয়ই তদন্ত করে দেখছি।’