‘দেশে আজ নতুন হাওয়া ভবন, আমরা কোথায় যাব’
৩১ জানুয়ারি ২০২০ ২১:৫৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দেশে আজ নতুন হাওয়া ভবন গড়ে উঠেছে মন্তব্য করে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘আমরা বিএনপির দুর্নীতি আর দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের লুটপাটের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। কিন্তু আজ যখন নতুন হাওয়া ভবন গড়ে ওঠে, নতুন করে দুর্নীতি মাথাচাড়া দেয়, দুর্বৃত্তয়ানের রাজনীতি আমাদের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন আমরা কোথায় যাব?’
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে নগরীর লালদীঘি ময়দানে ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেনন এসব কথা বলেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘খাল খননের নামে জিয়াউর রহমান একসময় হাজার হাজার দুর্নীতিবাজ তৈরি করেছিল। তেমনি আজকে এই চট্টগ্রাম মহানগরেও চাক্তাই খাল খননের নামে, ফ্লাইওভার নির্মাণের নামে সেই টাকা চলে গেছে দুর্নীতিবাজদের কাছে। কেন এই চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারে গাড়ি চলে না, কেন চট্টগ্রাম একটি সুন্দর বাণিজ্যিক নগর হবে না? কারণ লোভ সমগ্র চট্টগ্রামকে শুধু নয়, সমগ্র দেশকে গ্রাস করেছে।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি চলবে না। আমিও বলি, বাংলাদেশে দুর্নীতি চলবে না। কিন্তু দুর্নীতি চলবে না যখন বলি তখন সেই দুর্নীতিবাজরাই কিন্তু রাষ্ট্র-সমাজের ওপরের কাতারে বসে থাকেন। সেই দুর্নীতিবাজরাই মন্ত্রী উপদেষ্টা হন, সেই দুর্নীতিবাজরা সচিব, বড় কর্মকর্তা হন। তখন প্রশ্ন করতেই হয়- সেই দুর্নীতি আমরা বন্ধ করতে পারি কি না? সেই সম্পদ রক্ষা করতে পারি কিনা?’
মেনন আরও বলেন, ‘আমি জানি, এই চট্টগ্রামের কিছু লোক লক্ষ কোটি টাকা কামিয়ে বাংলাদেশের অনেক ব্যাংকের দখল নিয়েছে। যেসব ব্যাংক দখলে নিয়েছে সেগুলো থেকে গত কয়েক বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে চলে গেছে। অথচ কোনো ব্যবস্থা সরকার নিতে পারেনি। শেয়ারবাজারে মধ্যবিত্ত বিনিয়োগকারী শেষ হয়ে গেছে। সেই শেয়ারের টাকা চলে গেছে বিদেশে, চলে গেছে মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে। পাকিস্তান আমলের ৭৪ জন কোটিপতির জায়গায় এখন এক লাখ ৪০ হাজার কোটিপতি।’
বাংলাদেশে গরীব-নিম্নবিত্তরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে চলুক। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে ফেলে রেখে উন্নয়ন স্থায়ী হবে না। সবার উন্নয়ন হতে হবে। কিন্তু আমরা কি দেখি? পাটকলের শ্রমিকদের এখনো লড়াই করতে হয় তাদের মজুরির জন্য। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার মতো আজকের সরকারও পাটকলগুলোকে বেসরকারি মালিকানায় তুলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গার্মেন্টেসের শ্রমিক মা-বোনেরা যে মজুরি পান তাতে ১৫দিনও তাদের চলে না।’
বৈষম্য তা ঘোচাতে ওয়ার্কার্স পার্টি সমতাভিত্তিক, ন্যায্যতাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে বলে জানান মেনন।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে মেনন বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে বলতে পারি স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিজয় লাভ করবে। বিএনপি-জামায়াত চক্র যত বিরোধিতাই করুক, মানুষ উৎসব-আনন্দে ভোট দেবে। তবে আমার প্রশ্ন, এই নির্বাচনের পর কি যানজট দূর হবে? জলজট দূর হবে কি না ?’
একই সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘পত্রিকায় জেনেছি ৯ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। কানাডায় প্রবাসী বাঙালিরা মিছিল করেছেন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। উন্নয়ন যে হয়েছে তার ফল বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকে যান। কারণ তারা প্রকৃত রাজাকারের তালিকা করতে চান না। যারা বিদেশে টাকা পাচার করছেন তারাই আজকের দিনের প্রকৃত রাজাকার।’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে থেকেই ন্যায্য দাবি এবং শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনগণের পাশে থাকার কথা বলেন বাদশা।
সামাজিক ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্কার্স পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য হাজী বশিরুল আলম। ওয়ার্কার্স পার্টির চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌহানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পলিট ব্যুরো সদস্য কামরূল আহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী মাসুদ আহমেদ এবং চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি আবু হানিফ।