দুই সিটিতে নির্বাচন আজ, ভোটার উপস্থিতিই বড় চ্যালেঞ্জ
৩১ জানুয়ারি ২০২০ ২৩:১০
ঢাকা: দরজায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন। রাত পেরোলেই শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোট নেওয়া হবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুই সিটিতে টানা ভোটগ্রহণ চলবে। এরই মধ্যে সিটি নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।
শুক্রবার সকাল থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নির্বাচনি সামগ্রী। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হওয়ায় দুই সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোকেই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন।
প্রথমবারের মতো ঢাকার দুই সিটির সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে এবারের নির্বাচনে। সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মোট ৭৪৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে প্রার্থী ১৩ জন, কাউন্সিলর পদে ৭৩৬ জন।
দুই সিটি নির্বাচনে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৭ জন ভোটার ভোটের মাধ্যমে মোট ১৭২ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করবেন। এর মধ্যে দুই মেয়র ছাড়াও আছেন ১২৯ জন কাউন্সিলর ও ৪৩ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর।
ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেন, দুই সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। নির্বাচনে ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারে এবং এজেন্টারা যেন কেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারে, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
৫১ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা
ঢাকার দুই সিটির ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি কেন্দ্রে একজন প্রিজাইডিং অফিসার, ১৪ হাজার ৪৩৪টি ভোটকক্ষে একজন করে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও দুই জন করে পোলিং অফিসার দায়িত্বে থাকবেন। দুই সিটিতে সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪৬৮ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ১৪ হাজার ৪৩৪ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ২৮ হাজার ৮৬৮ জন পোলিং কর্মকর্তা রয়েছেনে। এছাড়াও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবস্থাপনায় সশস্ত্র বাহিনীর ৫ হাজার ২৮০ জন সদস্য থাকবেন। সবমিলিয়ে দুই সিটির ভোটে ভোটগ্রহণ কমর্কতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৫১ হাজার ৫০ জন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৫০ হাজার সদস্য
ভোটকেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার-ভিডিপির সদস্য থাকছে ৪১ হাজার ৯৫৬ জন। সাধারণ ভোটকেন্দ্রের প্রতিটিতে ১৬ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৮ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকবে। পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত ১২৯টি মোবাইল ফোর্সে থাকবেন এক হাজার ২৯০ জন, ৪৩টি স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবেন ৪৩০ জন, রিজার্ভ স্ট্রাইকিং ফোর্সে থাকবেন ৫২০ জন। দুই সিটিতে র্যাবের টিম থাকবে ১৩০টি।
এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে র্যাবের ১১ জনের একটি টিম দায়িত্ব পালন করবে। এসব টিমে দায়িত্বরত থাকবেন মোট ১ হাজার ৪৩০ জন র্যাব সদস্য। এছাড়াও দুই সিটিতে র্যাবের ১০টি রিজার্ভ টিম থাকবে, তাতে থাকবেন ১১০ জন সদস্য।
এর বাইরে রিজার্ভসহ দুই সিটিতে ৭৫ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্বে পালন করবেন। প্রতি প্লাটুনে গড়ে ৩০ জন করে মোট ২ হাজার ২৫০ জন বিজিবি সদস্য থাকবেন ভোটের দায়িত্বে। এছাড়াও ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনি অপরাধ দমন ও সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুই সিটিতে থাকবেন ১৭২ জন নির্বাহী ও ৬৪ জন বিচারিক হাকিম।
দেশি–বিদেশি ১০৮৭ পর্যবেক্ষক
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন বিদেশি পর্যবেক্ষকসহ ১ হাজার ৮৭ জন দুই সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এদের মধ্যে ২২টি দেশি সংস্থার মাধ্যমে ১ হাজার ১৩ জন স্থানীয় পর্যবেক্ষক রয়েছেন। অন্যদিকে, ১০ দূতাবাসের মাধ্যমে ৭৪ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক সিটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এদের মধ্যে ৪৬ জন সরাসরি বিদেশি নাগরিক এবং ২৮ জন বাংলাদেশি নাগরিক। এই ২৮ জন বাংলাদেশি ১০টি দেশের দূতাবাসে বিভিন্ন পদে কর্মরত।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ১৫৯৭টি
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই হাজার ৪৮৮টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ৫৯৭টি ভোটকেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর সিটিতে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা ৮৭৬টি, দক্ষিণে ৭২১টি। বাকি ৮৯১টি কেন্দ্র সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে গণ্য হবে। সব মিলিয়ে দুই সিটির মোট ভোটকেন্দ্রের ৬৪ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।
ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে ছয় জন করে সশস্ত্র পুলিশ (একজন উপপরিদর্শক এবং পাঁচ জন সহকারী উপপরিদর্শক ও কনস্টেবল), দুই জন করে অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার এবং ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্য (চার জন নারী, ছয় জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবে।
অন্যদিকে, সাধারণ ভোটকেন্দ্রগুলোর প্রতিটিতে চার জন সশস্ত্র পুলিশ (একজন উপপরিদর্শক বা সহকারী উপপরিদর্শক ও তিন জন কনস্টেবল), দুইজন অস্ত্রসহ অঙ্গীভূত আনসার, ১০ জন লাঠিসহ অঙ্গীভূত আনসার ও ভিডিপি সদস্য (চার জন নারী, ছয় জন পুরুষ) মোতায়েন থাকবে।
উত্তর সিটিতে ওয়ার্ড ও ভোটার
ঢাকা উত্তর সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ভোটার সংখ্যা ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। ৫৪টি সাধারণ ও ১৮টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড নিয়ে ডিএসসিসি গঠিত। এতে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্রে ৭ হাজার ৮৪৬টি ভোট কক্ষ রয়েছে। ডিএনসিসি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যুগ্ম সচিব মো. আবুল কাসেম। তার সহযোগী হিসেবে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা রয়েছেন ১৮ জন।
ডিএনসিসি’তে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী
ঢাকা উত্তর সিটিতে চূড়ান্তভাবে মেয়র পদে ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন— নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির তাবিথ আউয়াল, বাঘ প্রতীকে পিডিপি’র শাহীন খান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলে বারী মাসউদ, কাস্তে প্রতীকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাজেদুল হক ও আম প্রতীক নিয়ে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনিসুর রহমান দেওয়ান।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে ৫৪টি সাধারণ ও ১৮টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মোট ৩২৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।এর মধ্যে ৫৪টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ঢাকা উত্তর সিটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৪টি সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ২৫১ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের ৫৪ জন এবং বিএনপির ৫৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও উত্তরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৪০ জন এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ৩৪ জন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন আরও ৬৯ জন।
দক্ষিণ সিটিতে ওয়ার্ড ও ভোটার সংখ্যা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ভোটার ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩।৭৫টি সাধারণ ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড এই সিটি গঠিত। এই সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্রে ৬ হাজার ৫৮৮টি ভোটকক্ষ রয়েছে। ডিএসসিসি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ইসির যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল বাতেন। তার সঙ্গে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা থাকবেন ২৫ জন।
দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী ও কাউন্সিলর প্রার্থী
ডিএসসিসি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাত জন। এরা হলেন— নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি’র ইশরাক হোসেন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবদুর রহমান, ডাব প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আক্তারুজ্জামান অরফে আয়াতউল্লাহ, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহরানে সুলতান বাহরান এবং মাছ প্রতীক নিয়ে গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন।
অন্যদিকে দক্ষিণ সিটিতে ৭৫টি সাধারণ ও ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৪০৮ জন। এর মধ্যে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৩২৬ জন, ২৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৮২ জন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিদ্রোহী প্রার্থী
ঢাকা দক্ষিণে ৭৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ৩২৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগের ৭৫ জন এবং বিএনপির ৭১ জন প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়াও দক্ষিণে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৭২ জন এবং বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ৩১ জন। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন আরো ৭৭ জন।
দক্ষিণের চার ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী নেই
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে চার ওয়ার্ডে বিএনপির কোন প্রার্থী নেই। এর মধ্যে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে গেছে। এই দুইটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি কাউকে সমর্থন দেয়নি। তবে এই দুইটি ওয়ার্ডে বিএনপির পাঁচ জন নেতাকর্মী প্রার্থী আছেন।