রাজধানীতে ভোট উৎসব শুরু
১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:২৯
ঢাকা: রাজধানীর কেন্দ্রগুলোতে শুরু হয়েছে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় ভোটের আনুষ্ঠানিকতা।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ভোর থেকে কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ছিলেন প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ও গণমাধ্যমকর্মীরাও। কোথাও কোথাও ভোটারদের সঙ্গেই কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
সকালে ভোটগ্রহণের প্রথম প্রহরে রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রগুলোর চিত্র তুলে ধরেছেন সারাবাংলার প্রতিবেদকরা। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের দয়াগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে সকাল থেকেই ছিল ভোটারদের লাইন। এই কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৫২ জন।
গোপীবাগের আর কে মিশন রোডের শহীদ শাহজাজাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঢাকা দক্ষিণের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি কেন্দ্র। ভোট দেওয়ার জন্য সকাল ৮টা ৫ মিনিটে কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে ভেতরে ঢোকেন ভোটার ও গণমাধ্যমকর্মীরা। ভোটের প্রথম প্রহরে এই কেন্দ্রে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়ান ১৩ ভোটার। জানা গেলো, দক্ষিণের বিএনটির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন এই কেন্দ্রে ভোট দেবেন।
বাড্ডার মিছরিটোলা ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাছাকাছি অবস্থিত দুটি ভোটকেন্দ্র। আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, এর মধ্যে সেন্ট পলস স্কুল অ্যান্ড কলেজে শুধু নারীরা ভোট দিতে পারছেন। আর পাশেই অবস্থিত ডাইনামিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিচ্ছেন পুরুষ ভোটাররা।
সেন্ট পলসে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৪৩১ ও ডাইনামিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে মোট ভোটার ২ হাজার ৪৯৮ জন।
দুটি কেন্দ্রেই সব প্রার্থীর পোলিং এজেন্টরা উপস্থিত আছেন। মূল ফটক থেকে পোলিং এজেন্টদের তল্লাশি করে ঢোকানো হয়। এছাড়া ভোটগ্রহণ কক্ষগুলোতে যেসব পোলিং এজেন্ট আছেন তদারে কাছে যেন মোবাইল ফোন না থাকে সে বিষয়টি নিশ্চিত করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এসব কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি সকালে কম ছিল।
শ্যামলীর রিং রোডে বাদশা ফয়সাল ইনস্টিটিউটে কেন্দ্রটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে কেন্দ্র। সকালে নির্ধারিত সময় থেক্টেই শুরু হয় ভোটগ্রহণ। ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে নিয়ম অনুযায়ী ভোট দিতে দেখা গেছে।
ভোটার উপস্থিতি কম ছিল মিরপুরের রোটারী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রেও। প্রিজাইডিং অফিসার তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে জানান, ঠিক ৮টা থেকেই শুরু হয় এই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ।
রাজধানীর ধানমন্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট কেন্দ্র পাঁচটি। এখানে নারী ও পুরুষ ভোটার প্রায় ১১ হাজার। সকালে অবশ্য ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। চোখে পড়েনি বিএনপির কোনো পোলিং এজেন্ট।
সকাল ৮টায় গিয়ে দেখা যায় গেন্ডারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ শেষ হয়নি। ফলে এই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে দেরিতে। এখানে যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা দেরিতে এসে পৌঁছেন। ভোটগ্রহণ শুরু না হওয়ায় কেন্দ্রটিতে যান নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট রেবেকা সুলতানা। এরপর সকাল ৮টা ২৫ এ শুরু হয় ভোট। রেবেকা সুলতানা বলেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা সময়মতো কেন্দ্রে না পৌঁছায় ভোট গ্রহণে দেরি হয়। তবে এখন সব ঠিক আছে।
বাড্ডার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া মসজিদ রোডের দি ভায়োলেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ধানের শীষের প্রার্থীর কোনো পোলিং এজেন্ট নেই। এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. জাহিদুজ্জামান জানান, অন্য সব দলের পোলিং এজন্ট থাকলেও সকালে একজন ব্যক্তি কোনো কাগজপত্র ছাড়াই কেন্দ্রে এসে নিজেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট দাবি করেন। তবে যেহেতু তার কাছে এর পক্ষে কোনো কাগজ পাওয়া যায়নি তাই তাকে যত দ্রুত সম্ভব এজেন্ট হওয়ার কাগজপত্র তৈরি করে জমা দিতে বলেছেন।
সারাবাংলাকে জাহিদুজ্জামান বলেন, ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের সব কক্ষেই জায়গা রাখা হয়েছে। দুই কপি ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও কমিশনার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে কেন্দ্রেই পোলিং এজেন্ট হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাই কেউ যদি যথাযথভাবে ফরম পূরণ না করেন বা কাগজ জমা না দেন তাহলে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যায় না।
সেগুনবাগিচা হাইস্কুলে যথাসময়েই শুরু হয় ভোটগ্রহণ। কিছুক্ষণ পরে একদল লোক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয়। প্রিজাইডিং অফিসার আবু বকর বলেন, এখন পর্যন্ত যারা ভোট দিতে আসছেন তাদের ইভিএমে ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। শীতের সকাল হওয়ার কারণে সকালে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম। আশা করা যাচ্ছে যে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়বে।
এই কেন্দ্রে বিএনপির কোনো পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি বলেও জানান তিনি।
এদিকে বিএনপির পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে পাওয়া অভিযোগের পরিপেক্ষিতে সকাল সোয়া ৯টার দিকে এই কেন্দ্রে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অন্যদিকে তেজগাঁওয়ের সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকালে ভোটার উপস্থিতি বেশ কম ছিল। পাশের নাখালপাড়া প্রাইমারি স্কুলের কেন্দ্রটিতেও একই অবস্থা। সাধারণত কোনো নির্বাচনে এ দুটি কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি ভালো থাকে। তবে স্থানীয়রা জানালেন, সকালে ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর আবদুল্লাহ আল মঞ্জু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন কাঞ্চনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটায় সিভিল এভিয়েশনের কেন্দ্রটি কিছুটা উত্তপ্ত। স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন কাঞ্চনের মেয়ে নাজলী আশরাফ সঞ্চারী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বাবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় মঞ্জু আঙ্কেলের ছেলেরা আমাকে মেরেছে। কেন্দ্র থেকে আমাদের সব এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে।’
কাউন্সিলর প্রার্থী কাঞ্চন বলেন, ‘আমাকেও মারধর করা হয়েছে। আমার সাত সমর্থক আহত। তাদের সোহরাওয়ার্দীসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমার মেয়েকেও মারধর করা হয়েছে।’
এই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, কেন্দ্রে সকাল পৌনে ৯টা পর্যন্ত কোনো ভোটার প্রবেশ করেননি।
কেন্দ্রটির আশেপাশে পুলিশ র্যাব বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এসএমএন