ঢাকা: চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে অবস্থানরত ৩১২ বাংলাদেশিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকায় তাদের মধ্যে সাত জনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও একজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়েছে। বাকিদের আশকোনা হজ্জ ক্যাম্পে স্থাপিত ‘কোয়ারেনটাইন ইউনিটে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আগামী ১৪ দিন সেখানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তাদের।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টা ৫৫ মিনিটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে তারা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদুল আহসান সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার জানান, উহান শহরের তিয়ানহি ইন্টারন্যাশনাল বিমানবন্দর থেকে শনিবার ভোর পৌনে ১০টায় (বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ৮টায়) ৩১২ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট রওনা দেয়। বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটি সকাল ১১টা ৫৩ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
বিমানবন্দরে ‘হেলথ স্ক্রিনিং’য়ের পর আট বাংলাদেশিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় হাসপাতালে। বাকি ৩০৪ জনকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তত্ত্বাবধানে আশকোনা হজ ক্যাম্পে সদ্য স্থাপিত আইসোলেশন ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে দেশে ফেরার কথা থাকলেও দু’জন বাংলাদেশিকে নিয়ে আসা যায়নি বিমানের বিশেষ এই ফ্লাইটে। শরীরে জ্বর থাকায় তাদের চীনেই রেখে আসা হয়েছে কবলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন।
চীন ফেরত বাংলাদেশিদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, দেশে ফিরিয়ে আনা ৩১২ জনের মধ্যে আট জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকিরা আগামী দুই সপ্তাহ হজ ক্যাম্পে থাকবেন। সেখানে ‘আইসোলেশন ইউনিটে’ তাদের জন্য সব ধরনের ব্যব্স্থা করা হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ জানান, যে ৩১২ জন আজ এসেছেন, তাদের মধ্যে ২৯০ জন পুরুষ, ১০ জন নারী, বাকি ১২টি শিশু। শিশুদের মধ্যে তিন জনের বয়স একবছরেরও কম।
গত ৩১ ডিসেম্বর চীন প্রথম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায়, দেশটির উহান শহরে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। ধীরে ধীরে গোটা চীনেই ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের ২০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস। চীনে এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৫৯ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস নিয়ে জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়েছে।
চীনে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা দেশটিতে কার্যত ‘বন্দি’ হয়ে পড়েন। চীনের শহরগুলোর মধ্যে কেবল উহানেই অবস্থান করছিলেন তিন শতাধিক বাংলাদেশি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। চীন সরকারের অনুমতি মিললে বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে করে নিয়ে আসা হলো তাকে।