Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন শুরুই হয় প্রধানমন্ত্রীর বিধিলঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে: বিএনপি


১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:৪৫

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিধিলঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এদিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর ভোটদানের পর দেওয়া বক্তব্য সরাসরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সামিল বলেও অভিযোগ করেছে দলটি।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এসব অভিযোগ এনেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য তুলে ধরেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করেছি এবং নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি আমাদের অবস্থান থেকে সামান্য কিছু বলার জন্য। কারণ, পুরোটা বলতে গেলে সারারাত লেগে যাবে।

বিএনপি মহসচিব বলেন, আজ সকালে শুরুই হয়েছে বড় রকমের বিধিলঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে। সেটি হলো— প্রধানমন্ত্রী সিটি কলেজে ভোট দিতে গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি সম্পূর্ণভাবে সরাসরি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের সামিল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ভোটারদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান, যা নির্বাচনি আচরণবিধির মধ্যে পড়ে না। এটি আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বান সন্ত্রাসীদের ভোটকেন্দ্র দখল ও দলীয় এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়াকে উৎসাহিত করেছে, নির্বাচনি কর্মকার্তাদের নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরুৎসাহিত করেছে।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেওয়ার ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ না মিললে কী করণীয়, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ২৯ জানুয়ারি জারি করা পরিপত্রের কথা তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। ওই পরিপত্রে বলা হয়েছে, যদি কোনো ভোটারের আঙুলের ছাপ ইভিএম মেশিনে ম্যাচিং না হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ভোট কক্ষের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজের আঙুলের ছাপ দিয়ে কক্ষের সর্বোচ্চ ১ শতাংশ ভোটারকে শনাক্ত করে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিটি ভোট কক্ষের এই ১ শতাংশ ভোটের অতিরিক্ত বায়োমেট্রিক নির্বাচন কমিশন কর্তৃত সরবরাহ করা একটি পিন নম্বর ছাড়া সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিজের বায়োমেট্রিক দিয়ে আর খুলতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে ১ শতাংশের অতিরিক্ত ভোটারদের বায়োমেট্রিক পিন নম্বর দিয়ে দিয়েছে। এর ফলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের আঙুলের ছাপে ভোটার উপস্থিত না হলেও সরকারের চাহিদা মোতাবেক ওই কেন্দ্রের মোট ভোটের যত ভোট প্রয়োজন, ততসংখ্যক ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবে।

নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধন্তের ফলে ইভিএমের মাধ্যমে জালিয়াতির পথ ক্ষমতাসীনদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা যেটা আশঙ্কা করেছি, সেটিই হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং যারা বাধা অতিক্রম করে ভোট কেন্দ্রে গিয়েছে, তাদেরও সরকারি দলের লোকেরা ভয়ভীতি হুমকি-ধমকি এবং মারপিট করে বের করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, এজেন্টদের টিকে থাকার ক্ষমতা থাকতে হবে। এটা বলে সরকার দলীয় সমর্থকদের উসকে দিয়ে সংঘাতের দিকে যাওয়ার ইন্ধন দিয়েছেন। একজন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, এজেন্টদের ভেতরে ঢুকতেই দেয়নি। এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিজেই বলেছেন, এ ধরনের নির্বাচন আমি দেখতে চাইনি। শুধু তাই নয়, তিনি নিজেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সাত বার দিয়েও মেলাতে পারেননি।

পাড়া-মহল্লায় সাধারণ সন্ত্রাসীদের মহড়ার মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ বিএনপির। দলটির মহাসচিব বলেন, ভোটাররা নিরাপত্তাহীনতার কারণে ভোট কেন্দ্রে যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। যেসব ভ্রাম্যমাণ আদালত দেওয়া হয়েছিল, তারা কেন্দ্রে যাননি।

মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রের সামনে বেশকিছুসংখ্যক ব্যক্তি নৌকা মার্কা ধারণ করে অবস্থান করছিলেন। সেটা কোথাও দুই-আড়াইশ’র কম নয় এবং তারা বহিরাগত। তাদের ব্যাপরেও নির্বাচন কমিশন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। অনেক কেন্দ্রে ইভিএমে ধানের শীষের প্রতীক ছিল না বলে ভোটাররা ভোট দিতে পারেননি। এছাড়া অনেক ভোটকেন্দ্রে আঙুলের ছাপ নিয়ে শনাক্ত করার পর ভোট না নিয়েই বের করে দেওয়া হয়েছে। কিংবা ভোটারের সঙ্গে ভোটকক্ষে ঢুকে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের ভোট দিতে বাধ্য করেছে।

গণমাধ্যমকর্মীদেরও কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়ার অভিযাগ করেছে বিএনপি। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অনেক স্থানে সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে, অনিয়মের ছবি তুলতে বাধা দেওয়া হয়েছে, মোবাইল এবং ক্যামেরায় তোলা ছবি ডিলিট করতে বাধ্য করেছে এবং সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই নির্দেশ অনুযায়ী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ভোটকেন্দ্র আশপাশে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করেছেন। যেসব ভোটার আওয়ামী লীগকে ভোট দেবেন না বলে মনে করেছেন, সেসব ভোটারকে কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা উত্তর  ও দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী, তাদের এজেন্টরা শত শত অনিয়মের অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠালেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ডিএনসিসি ডিএসসিসি নির্বাচনি প্রতিক্রিয়া বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিটি নির্বাচন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর