৫ বছর পর ঢাকায় বিএনপির হরতাল আজ
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২৮
ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ আজ রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চলবে এ হরতাল। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার পর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হরতালের ঘোষণা দেন।
সর্বশেষ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (পাঁচ জানুয়ারির নির্বাচন) বর্ষপূর্তির দিন পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে না দেওয়ায় ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধের ডাক দেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেই অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যেই দফায় দফায় চলতে থাকে হরতাল। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিন চলতে থাকে এই হরতাল-অবরোধ।
অবশেষে ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল স্বেচ্ছায় বন্দিত্বের অবসান ঘটিয়ে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসেন খালেদা জিয়া। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে। তার পর টানা প্রায় পাঁচ বছর আর কোনো হরতাল-অবরোধের কর্মসূচির ডাক দেয়নি বিএনপি। কেবল মাত্র অন্য রাজনৈতিক দলের ডাকা হরতালে নৈতিক সমর্থন দিয়েছে দলটি। এমনকি খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পরও হরতাল ডাক দেয়নি বিএনপি।
কিন্ত দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে ফল বর্জন ও হরতাল ডাক দিয়েছে বিএনপি। হঠাৎ ডাকা এই হরতালে নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো শঙ্কা বা আতংক না থাকলেও কৌতুহল আছে। হরতাল ডাকার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই হরতালের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। খোদ বিএনপি কর্মীরাই বলছেন, কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ ডাকা এই হরতাল বিএনপির জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।
নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান বিএনপি’র, রোববার হরতাল
সিটি নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে হরতাল ঘোষণার সময় ফখরুল বলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণে নির্বাচনের ফলাফলকে আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। দুই সিটির নির্বাচনে ভয়াবহ রকমের কারচুপি, জালিয়াতি, জবরদস্তি করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কারণে এবং জনগণের রায়কে একেবারে পদদলিত করে দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই নির্বাচনকে প্রভাবিত ও লুট করে ফলাফল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির প্রতিবাদে আমরা আগামীকাল (রোববার) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা শহরে হরতাল আহ্বান করছি। আমরা আশা করব, ঢাকাবাসী তাদের অধিকার রক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে এই হরতাল পালন করবে এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্য সহযোগিতা করবে।’
হরতালের আওতামুক্ত
রাজধানীতে ডাকা সকাল-সন্ধ্যা এ হরতালের আওতামুক্ত থাকবে অ্যাম্বুলেন্স, লাশবাহী গাড়ি, ওষুধ ও খাবারের দোকান, সংবাদপত্রের অফিস, সংবাদপত্রে গাড়ি এবং সিটি করপোরেশনের বর্জ্যবাহী গাড়ি। হরতাল পালনের সময় সেবাদানকারী এসব প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে, সেদিকে সবাইকে খেয়াল রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি
বিএনপির ডাকা হঠাৎ হরতালে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে প্রিজন ভ্যান, জলকামান, রায়টকার। ভোটের জন্য মাঠে নামানো বিজিবি সদস্যদেরকেও রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে রাখা হতে পারে সম্ভব্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে পুলিশ এমনিতেই কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রেখেছে রাজধানী ঢাকা। বিএনপি হরতাল ডাকায় নিরাপত্তার বিষয়টি আরও জোরদার করবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় রোববার সারাদিন পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি হতে দেবে না। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে।’
বিভিন্ন দল ও জোটের সমর্থন
বিএনপির ডাকা হরতালে সমর্থন দিয়েছে বেশ কয়েকটি সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রোববারের সকাল সন্ধ্যা হরতালে সমর্থন দিয়েছে। পাশাপাশি হরতাল সফল করার জন্য তারা ঢাকাবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
কারচুপির অভিযোগ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন বিএনপি মির্জা ফখরুল হরতাল