পিকেটিংয়ে বিএনপি একাদশ!
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:৩৯
ঢাকা: রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। গত এক যুগ ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সবচেয়ে সক্রিয় নেতা তিনি। প্রায় প্রতিদিন দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল-সামবেশসহ কোনো না কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা যায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে প্রচারণায় গিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) হামলার শিকার হন। ভর্তি হন রাজধানীর ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।
কিন্তু ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘ব্যাপক করাচুপি’র অভিযোগে পাঁচ বছর পর ডাকা বিএনপির হরতাল রুহুল কবির রিজভীকে হাসপাতালের বেড থেকে টেনে এনেছে নয়াপল্টন কার্যালয়ে। হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় হাসপাতাল থেকে পালিয়ে এসেছেন তিনি। তীব্র শীত উপেক্ষা করে ভোর ছয়টা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রধান ফটকে হরতালের পক্ষে পিকেটিং করেছেন রিজভী।
তবে তিনি একা নন। তার দুই পাশে আরও ১০জন নেতাকর্মী ছিলেন। অর্থাৎ সব মিলে পিকেটিংকারীর সংখ্যা ছিল ১১! সকাল ৭ টা ৪১ মিনিটে তোলা ছবিতে দেখা যায় রিজভীর ঠিক পেছনে স্বেচ্ছাসেবক দলের দফতর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ডান পাশে বিএনপির নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা এবং বাম পাশে মহিলা দলের নেতা লাইলী বেগম স্লোগান দিচ্ছেন।
বাকি সাতজনের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আবুল কালাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মোরশেদ আলম, যুবদল নেতা মো. সোহেল মামুন, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ওমর ফারুক কাউসার, ছাত্রদল নেতা কে এম রেজাউল করিম, মো. আখতার আহসান ও মো. নাসির উদ্দীন নাসির।
ঢাকা বিশ্ববদ্যিলায়ের শিক্ষার্থী ছাত্রদল নেতা আখতার আহসান থাকেন ক্যাম্পাসে। বিএনপির ডাকা হরতালে পিকেটিং করার জন্য রোববার ভোর ছয়টায় শাহবাগ থেকে পায়ে হেঁটে নয়াপল্টন কার্যালয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন। যারা প্রত্যেকেই রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে পিকেটিংয়ে অংশ নিয়েছেন।
কথা হয় আখতার আহসানের সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘খুব ভোরে রাস্তায় পুলিশ না থাকায় নিরাপদেই কার্যালয়ে পৌঁছেছি। মূলত, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পিকেটিং করার লক্ষ্য নিয়েই এসেছি। এখানে আসার পর রিজভী ভাইকে দেখে মনে সাহস বেড়েছে।’
সকাল ৮ টা পর্যন্ত এই ১০জনকে নিয়েই কার্যালয়ের প্রধান ফটকে পিকেটিং করেন রিজভী। সকাল ৮ টার পর পিকেটিংয়ে যোগ দেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং সাবেক মহিলা কমিশনার মনি বেগম। তারপরও মোট পিকেটারের সংখ্যা ওই ১১ জনই ছিল! কারণ, নতুন দু’জন যোগ দেওয়ার পর পুরোনো দু’জন কার্যালয়ের ভেতরে চলে যান। বিষয়টি কাকতালীয় হলেও পিকেটার সংখ্যা দাঁড়ায় ১১ তে।
২০১৫ সালের ৪ এপ্রিলের পর হরতাল ডাকেনি বিএনপি। এই পাঁচ বছর অনেক বড় বড় ইস্যু এসেছে দলটির সামনে। খালেদা জিয়া গ্রেফ্তার হয়েছেন। বার বার জামিন চেয়েও পাননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপির পক্ষ থেকে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়নি তারা।
তৃণমূল ও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিয়ে হরতাল-অবরোধের মতো ‘কঠোর’ কর্মসূচি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। তারপরও হরতাল-অবরোধ দেননি বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা।
কিন্তু ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ এনে হঠাৎ ডাকা হরতালে ওই ১১ জন ছাড়া আর কোনো নেতাকর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। রোববার ভোর ছয়টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত রাজধানীর মুগাদ, কমলাপুর, মতিঝিল, পুরানা পল্টন, প্রেসক্লাব, ঢাকা মেডিকেল এলাকা, সেগুন বাগিচা, কাকরাইল, বিজয়নগর, শান্তিনগরসহ ও নয়াপল্টনসহ অন্তত ১৫টি স্থান ঘুরে হরতালের পক্ষে কোনো পিকেটিং দেখা যায়নি।
বিএনপির ডাকা হরতালে সকাল থেকেই যানচলাচল ছিল স্বাভাবিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গণপরিবহন বেড়েছে ঢাকার রাস্তায়। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে। সাধারণ মানুষ ও পথচারীরদের মধ্যে হরতাল নিয়ে কোনো আগ্রহ বা আতঙ্ক লক্ষ্য করা যায়নি।