সরৌশী এবারও জিতবে
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:২২
ঢাকা: ‘এর আগেও লড়েছে। জিতেছে সে। আশা করছি এবারও জিতবে। তবে এবারের লড়াইটা ওর জন্য বেশ কঠিন ও কষ্টের।’
এভাবেই সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যম ফেসবুকে হৃদয়স্পর্শী এমন স্ট্যাটাস দেন সরৌশীর বাবা টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ টোয়েন্টিফোরের রিপোর্টার ও উপস্থাপক শেখ গোলামুন্নবী জায়েদ। সরৌশীর মা ওরিন নাশিদ ঋদি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক। পরিবারটির বাস চট্টগ্রামে।
এর আগে ২৪ জানুয়ারি (শুক্রবার) বিকেলের দিকে বাসার রান্নাঘরে রাখা গরম পানিতে ঝলসে যায় সরৌশী। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ২৬ জানুয়ারি (রোববার) রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে। বর্তমানে সে নিবিড় পর্যবেক্ষক কেন্দ্র (আইসিইউতে) ভর্তি আছে।
সরৌশীর বাবা জায়েদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, ‘চিকিৎসকরা বললেন, সরৌশীর ৩৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। ডিপ বার্ণ বেশি, জ্বর ও ডায়রিয়া থামছে না। আইসিইউতেই অক্সিজেন চলছে। ইনফেকশনের ভয় আছে। চিকিৎসকরা আরও বলেছেন, আল্লাহকে ডাকো, বাকিটা আমরা দেখছি ।
অনেকেই দেখতে চেয়েছেন, তাই আজকের ছবিটি দিলাম। আমি বিশ্বাস করি আমার সরৌশী সম্পূর্ণ সুস্থ হবে। বড় হয়ে মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হবে। আমি আস্তিক, স্রষ্টাকে ভয় করি। নিম্ন মধ্যবিত্ত। আমার কোনো অসৎ রোজগার নেই। স্বল্প আয় দিয়েই টেনেটুনে হলেও হাসিমুখে বাঁচার চেষ্টা করি। আমার দেশ ও মানুষকে ভালোবাসি।’
তিনি আরও লিখেন, ‘যখন যেখানে কাজ করেছি, কর্মনিষ্ঠ থেকে করেছি। কাউকে কখনও শারীরিকভাবে আঘাত করিনি, চেষ্টাও করিনি। নানা কারণে আমার দ্বারা কেউ মনোকষ্ট পেয়ে থাকলে আমাকে মাফ করে দেবেন। সরৌশীর মা ওরিন নাশিদ হৃদি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ায়। ও কঠিন দুনিয়ার অনেক কিছুই বোঝে না। এই সন্তানটিকে আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠানোর সময়ও অনেক জটিলতা ছিল। প্লাসেন্টা প্রিভিয়া থাকায় মায়ের পেটে ৩ বা সাড়ে ৩ মাস থেকে ওর পৃথিবীতে আসা নিয়ে শঙ্কা ছিল। রাতে অনেক সমস্যা হতো। আমি ধরফর করে উঠে বসতাম। ডাক্তারকে কল দিয়ে ইঞ্জেকশনের নাম নিয়ে ছুটতাম এক ফার্মেসি থেকে আরেক ফার্মেসি।’
নিজের স্ত্রীকে নিয়ে জায়েদ আরও লিখেন, ‘বাসায় নার্স আনা খরচের ব্যাপার, তাই আমিই ইঞ্জেকশন দিতাম। অদক্ষ হাতে সিরিঞ্জের অনেক খোঁচা সে দাঁত চেপে সহ্য করেছে। তখন হৃদি মিরপুর ক্যান্টম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। এই প্রতিষ্ঠানটির কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ আমরা। আটমাসের সরৌশীকে পেটে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক নিয়েছিল হৃদি।’
মেয়ের বর্তমান অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মা সরৌশীর এবারের পরীক্ষাটা বেশ কঠিন। তাই এবার সবাই ওর সাথে। সবাই দোয়া করছেন। দোয়ারই আবেদন রাখছি। এবারের লড়াই আরও শক্তিশালী। ওর অনেক ধৈর্য্য। আমার সরৌশী এবারও জিতবে ইনশাআল্লাহ।’
২৯ জানুয়ারি (বুধবার) দুপুরের দিকে কথা হয় সরৌশীরর বাবা জায়েদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সরৌশী খুবই চঞ্চল প্রকৃতির। ওর মা সবসময় চোখে চোখে রাখতো। বাসায় একজন কাজের বুয়াও আছে। সেও সরৌশীকে আদর করে। চোখে চোখে রাখে। অনেক কবিতা বলা শিখেছে। এক থেকে দশ পর্যন্ত গুনতে শিখেছে। যখন গোনা শেষ হয় হাত তালি না দিলে রাগ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।’
জায়েদ বলেন, ‘সরৌশীকে রক্ত দিতে হচ্ছে। সাদা ও লাল এই দুই ধরণের রক্তই লাগছে। সেটার জোগার হয়েছে। বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকসহ সবাই আমাকে সাহায্য করছে।’
রোববার (২ ফ্রেব্রুয়ারি) কথা হয় শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শিশুটির অবস্থা খারাপও বলা যাবে না, আবার ভালও বলা যাবে না। ৩৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। অনেক ডিপ বার্ন। ইনফেকশন হওয়ার ভয় আছে। কয়েক ব্যাগ রক্ত লাগবে। বাকি উপরওয়ালার ইচ্ছা। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’
সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, ‘আজ সকালেই সরৌশীকে দেখে এসেছি। ওর গায়ে জ্বর আছে। কাল ক্ষতের জায়গাগুলো ড্রেসিং করা হবে। এর পরই আসলে তার শরীরির অবস্থা সম্পর্কে বলা যাবে।’