‘প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে সমানতালে চলতে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলছি’
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:৩১
ঢাকা: দক্ষ মানবসম্পদ হিসাবে উপযুক্ত হয়ে গড়ে উঠে বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে আমাদের দেশের মানুষ যেন সমানতালে চলতে পারে; সে লক্ষ্যেই সরকার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।
এ কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন অব বাংলাদেশ (আইডিইবি)’র ২৩তম জাতীয় সম্মেলন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তার শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। ‘স্কিল রেডিনেস ফর এচিভিং এসডিজিএস আইআর ৪ দশমিক শূন্য’ শিরোনামে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন হবে। ১৯৯৬ সালে ১২টা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করি। আইন পাস করি। ছয়টার নির্মাণ কাজও আমরা শুরু করেছি। অর্থাৎ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি-কারিগরি শিক্ষা; এর উপর সবচেয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সৃষ্টি করতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমারা প্রতিটি ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। যত বেশি বেসরকারি খাত উন্মুক্ত হবে, যত বেশি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ আসবে, তত বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা এই পদক্ষেপ নেই। ইতোমধ্যে আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অনেক বড় বড় প্রজেক্টও হচ্ছে। সেখানে আপনাদের অবদান রয়েছে।
‘বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। আর বিশ্ব এখন প্রযুক্তিনির্ভর। কাজেই আমরা কারিগরি শিক্ষাকে যেমন সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি, সেই সঙ্গে প্রযুক্তি শিক্ষাকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। আমরা যখন ১৯৯৬ সালে সরকারে ছিলাম, জাতিসংঘ এমডিজি গোল্ড নির্দিষ্ট করেছিল, তখনও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেখানে আমরা সম্পৃক্ত ছিলাম।’
সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সরকার তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে এসডিজি গোলের সমস্ত বিষয়গুলি সেখানে সম্পৃক্ত রয়েছে। আগামীর জন্য আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী প্রণয়নের কাজও ইতোমধ্যে শুরু করেছি। আমরা একটা পরিকল্পনা নিয়ে দেশটাকে গড়ে তুলি। সেইসঙ্গে ২০১০ থেকে ২০২০ পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ২০২১ থেকে ২০৪১ বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিকল্পনা আমরা প্রণয়ন করে যাচ্ছি। সেটার প্রণয়ন খসড়া হয়ে গেছে।
এছাড়াও আগামী দিনে শত বছরের বাংলাদেশ কেমন হবে, আগামীর প্রজন্ম উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশে বসবাস করবে, সেই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে ডেল্টা প্ল্যান তথা বদ্বীপ পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ক্ষমতাসীন সরকার তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এ লক্ষ্যে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আপনাদের সামনে অনেক কাজ। আপনাদের জন্য অনেক কর্মক্ষেত্র বিস্তৃত করে দিয়েছি। অনেক কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। শুধু আপনারা না; প্রজন্মের পর প্রজন্ম যারা আসবে তাদের জন্যও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়ে যাচ্ছি। পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি নির্ভর। কাজেই চতুর্থ বিপ্লব হবে। তার জন্য আমাদের দরকার দক্ষ জনশক্তি। সে কারণে আমরা কারিগরি শিক্ষার উপর সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু আমাদের দেশের জন্য না। আমাদের বহুলোক বিদেশে কাজ করে। তারা বিদেশে যেতে পারবে। তারা দক্ষতার সাথেই যাক, সেটাই আমরা চাই। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কারিগরি শিক্ষা, বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিয়ে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছি। পাশাপাশি বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানগুলি তাদেরও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
এর কারণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবসময় মনে করি যে একটি দেশকে যদি গড়ে তুলতে হয় দক্ষ মানবসম্পদই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ইতোমধ্যে গত ১১ বছরের সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৫’শ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা সবসময় বিশিষ্ট ভূমিকা রেখে থাকে সে কথা স্বীকার করেন তিনি। পাশাপাশি জাতির পিতা যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার কাজে হাত দেন তখন তারা সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করে এই বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলায় সহযোগিতা করেছিলেন উল্লেখ করে তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন তিনি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য ঢাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন,আমি ঢাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই যে ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রকে জয়যুক্ত করেছেন। তাদেরকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ, অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আইডিইবির সভাপতি একেএমএ হামিদ, সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।