Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিদেশে গিয়ে দেশের বদনাম নয়, এটা বঙ্গবন্ধুর হিতোপদেশ’


২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:০৯

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫২ সালে চীন ভ্রমণের পর তার লেখার মধ্য দিয়ে চীন সম্পর্কে যে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, বিশ্বে ঠিক সেই জায়গাটায় চীন তার অবস্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।’

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

‘বিশ্ববাসী আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি জানুক, এটাই আমরা চাই’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেকেই বিদেশিদের কাছে দেশের বদনাম করতে গিয়ে বেশি উৎসাহিত হয়ে যা না ঘটে, তাও যে আরেকটু বেশি করে বলে। কিন্তু জাতির পিতা বলছেন, আমাদের দেশের ভেতরে যা হচ্ছে সেটা নিয়ে আমরা বিদেশে এসে দেশের বদনাম করতে পারি না।’

‘আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের ভাষা, বাংলা আমাদের দেশ। এই পরিচয়টা পেয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিতে। কিছুক্ষণ পূর্বেই আমরা তার লেখা ‘নয়া চীন’ যেটা আমরা নাম দিয়েছি ‘আমার দেখা নয়া চীন’ এই বইটির মোড়ক উন্মোচন করলাম।’

জাতির পিতার লেখনীর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ‘কারাগারে যখন তিনি ছিলেন, আমার মা সবসময় লেখার খাতা কিনে দিয়ে কিছু লেখার জন্য অনুরোধ করতেন। সেই থেকেই তার লেখা শুরু। ইতোমধ্যে আপনারা অসমাপ্ত আত্মজীবনী পেয়েছেন। যেটা প্রায় ১৩টা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে এবং আরও অনেক দেশ অনুবাদ করছে।’ এছাড়া জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচার চেয়ে এই বইটি সবথেকে পূর্বে লেখা বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

এর কারণ তুলে ধরে বলেন, ‘কারাগারে খাতা দেওয়া হত, সেই খাতাগুলি সেন্সর করে দেওয়া হত। ওই সেন্সরের যে সিল দেওয়া আছে যে তারিখ, সেই তারিখ থেকেই আমরা খুঁজে পেয়েছি, এটা ১৯৫৪সালে লেখা। এছাড়া বইয়ের মলাটে ব্যবহার করা মনোগ্রাম হিসাবে পটভূমিও তুলে ধরেন তিনি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে শান্তি সম্মেলনে তিনি যোগ দিয়েছিলেন, সেই শান্তি সম্মেলনে এই মনোগ্রাম (শান্তির পায়রা, এটা পিকাসোর তৈরি করা) সেই শান্তি সম্মেলনের ছবি।’

বিজ্ঞাপন

এজন্য কবি তারিক সুজাতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৫২ সালে জাতির পিতা যে চীনে গিয়েছিলেন, আমরা তার লেখা খাতাটা পেয়েছিলাম কিন্তু কোনো ছবি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এমনকি মনোজ বসু তিনিও গিয়েছিলেন এবং তার লেখা চীন দেখে এলাম, সেই বইটিও আমি খুঁজেছি। কোথাও যখন আমি খুঁজে পাচ্ছি না। আমিও যখন চীনে বারবার গিয়েছি, তখন বারবার আমি চীন সরকারকেও বলেছিলাম, আমাকে যদি ছবিগুলো খুঁজে দিতে পারেন। তবে তাদের কাছেও তেমন কিছু পাইনি। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন (শি জিনপিং) তিনি আমাকে একটা অ্যালবাম উপহার দিয়েছিলাম এবং সেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু আমাদের এখান থেকে একটা পার্লামেন্ট পার্টির নেতৃত্ব দিয়ে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় চীন ভ্রমণ করেছিলেন সেই ছবিগুলো আমরা পেয়েছিলাম।’

‘কিন্তু পরর্বীতে আমি যখন বারবার খোঁজ করছি, তখন একসময় তারিক সুজাত যে যেভাবে হোক, এই ১৯৫২সালের ছবি মনোগ্রাম এবং ওই সম্মেলনের অনেক তথ্য সে এনে দিল।’-বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তখন নয়া চীন বলা হত। কারণ সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশটি নয়া চীন নামেই পরিচিত ছিল বলেও জানান তিনি।

বইটির বিশেষ দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বইতেই লেখা আছে ওই শান্তি সম্মেলনে প্রথম বাংলা ভাষায় বক্ততা দিয়েছিলেন এবং মনোজ বসুও যেটা লিখেছেন। তিনি নিজেও বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দিয়েছেন এবং তার লেখা বইতে আছে, একজন যুবক বাংলা ভাষায় বক্ততা দিল। এই যে বাংলা ভাষাকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়া, বাংলা ভাষায় বক্তৃতায় দেওয়া; এটা ১৯৫২ সালেই প্রথম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছেন।’

‘সাধারণত যখন কেউ কোনো দেশে যায় বা সম্মেলনে যায়, তো সেই সম্মেলন নিয়েই ব্যস্ত থাকে। কিন্তু এখানে আমরা দেখেছি, একদিকে তিনি শান্তি সম্মেলনের বিবরণ দিয়েছেন, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানের বিবরণ দিয়েছে। সেই সঙ্গে নয়া চীনের মানুষের অবস্থাটা কি? তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা, তাদের ভিতরে কি পরিবর্তন আসল? বা সরকার কি কি করেছে? সেখানকার কৃষক শ্রমিক এমনকি স্কুলের ছোটছোট শিশু সকলের কথাই তিনি বলেছেন এবং একটা সাধারণ মানুষ কিভাবে জীবনযাত্রা করে সেটাও তিনি দেখতে গিয়েছিলেন।’

বিজ্ঞাপন

‘তার দেখার কাছে যেটা আমার কাছে মনে হয়েছে, তিনি একজন শুধু পর্যটকই শুধু না, তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন, আবার যেখানে সমালোচনা সেখানে সমালোচনাও করেছেন। কাজেই সমালোচক হিসাবেও পাই, পর্যটক হিসাবে পাই। আবার যেখানে ভাল কাজ দেখেছেন, সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং প্রশংসা করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বইয়ের বিশেষ একটি দিক নজরে আসার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতা যিনি এত অত্যাচারিত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন পাকিস্তানি শাসক দ্বারা। কেবল তিনি এই নির্যাতন ভোগ করেই তিনি বিদেশে গেলেন। কিন্তু সেখানে যেয়ে তিনি পাকিস্তানি শাসকরা যে তাকে এত অত্যাচার করেছে বা এখানে এত কিছু করেছে সে বিষয়ে কিন্তু কোনো কথা কারও কাছে বলেন নাই। বরং তিনি বলছেন আমাদের দেশের ভেতরে যা হচ্ছে সেটা- আমরা তো বিদেশে এসে দেশের বদনাম করতে পারি না।’

‘আমরা এখানে দেখি আমাদের দেশে অনেকেই বিদেশিদের কাছে আমাদের দেশের বদনাম করতে গেলেই যেন আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে যা না ঘটে তা যেন আরেকটু বেশি করে বলে। এই প্রবণতাটা আমরা দেখি।’

‘তিনি একজন নেতা। এত অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে, তারপরে যখন বিদেশে গেলেন, সেখানে তিনি কত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং সহনশীল যে আমার দেশের বদনাম বিদেশে কেন করবে, বিদেশে করা যাবে না। এই যে একটা বিরাট দিক আমরা দেখি, এটা খুব অবাক লাগে। নয়া চীন ভ্রমণ আমি মনে করি, আপনাদের পড়লে ভাল লাগবে এবং আপনারা তখনকার চীনের অবস্থা জানতে পারবেন।’

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে উৎসর্গ করার জন্য বাংলা একাডেমির প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।

গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রামেন্দু মজুমদার।

সারাবাংলা/এনআর/এমআই

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৫০

সম্পর্কিত খবর