সাংবাদিকদের ওপর হামলায় আর্টিকেল নাইনটিনের উদ্বেগ
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:৪৬
ঢাকা: ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের উপর হামলা ও হেনস্থার ঘটনায় উদ্বেগ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে মত প্রকাশের অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আর্টিকেল নাইনটিন। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
আর্টিকেল নাইনটিন জানিয়েছে, দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অন্তত ১০ জন সাংবাদিক হামলা ও হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংগঠনটির তথ্যমতে পেশাগত দায়িত্বপালনকালে হামলা ও হেনস্থার শিকার সাংবাদিকরা হলেন- অনলাইন নিউজ পোর্টাল আগামিনিউজ.কমের রিপোর্টার মোস্তাফিজুর রহমান সুমন, প্রেস বাংলা এজেন্সির (পিবিএ) বিশেষ প্রতিনিধি জিসাদ ইকবাল, কালের কণ্ঠের প্রধান আলোকচিত্রী শেখ হাসান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদক মাহবুব মমতাজি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদক গোলাম রাব্বানী, ডেইলি বিজনেস স্ট্যান্ডর্ডের প্রতিবেদক নুরুল আমিন, পরিবর্তন ডটকমের ফটো সাংবাদিক ওসমান গনি, দৈনিক যুগান্তরের গে-ারিয়া প্রতিনিধি আল ফাতাহ মামুন, নয়াদিগন্তের স্টাফ রিপোর্টার শামছুল ইসলাম এবং ইনকিলাবের স্টাফ রিপোর্টার ফারুক হোসাইন।
পেশাগত দায়িত্বপালনকালে মোহাম্মাদপুর এলাকার রায়েরবাজার সাদেক খান রোডে হামলার শিকার হন মোস্তাফিজুর রহমান সুমন। মিছিলের ছবি তুলতে গেলে সরকারি দলের সমর্থকরা তাকে প্রথমে বাধা ও পরে ব্যাপক মারধর করে। হামলায় গুরুতর আহত সুমনকে প্রথমে জেএইচ শিকদার উইমেনস’ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। নিকুঞ্জে জানে আলম স্কুল কেন্দ্রে জিসাদ ইকবালকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এসময় তার ক্যামেরাও ভাঙচুর করা হয়। পরে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাদারটেক স্কুল কেন্দ্রে কালের কণ্ঠের প্রধান আলোকচিত্রী শেখ হাসানের ওপর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা শেখ হাসানের ক্যামেরার মেমোরি কার্ড নিয়ে যায়।
আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘বৈশ্বিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ে আর্টিকেল নাইনটিনের সর্বশেষ ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন (গ্লোবাল এক্সপ্রেশন রিপোর্ট) অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা চর্চায় বাংলাদেশ পিছিয়ে। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক কর্মীদের দ্বারা সাংবাদিক তথা মত প্রকাশকর্মীদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ, মামলা ও নিপীড়নের যে সংস্কৃতি চলমান রয়েছে, এ ধরনের হামলার ঘটনা সেই বাস্তবতার প্রমাণ দেয়।’ তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর হামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে ক্রমাগতভাবে সঙ্কুচিত করা হচ্ছে, যা গণতন্ত্রের জন্য বিরাট হুমকি। সরকার জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিসরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিক তথা মানবাধিকারকর্মীদের সুরক্ষার কথা বললেও বাস্তবতা বদলায়নি। নিকট ও দূর অতীতে সাংবাদিকদের ওপর যে সব হামলা হয়েছে, তার কোনটিতেই এখনো পর্যন্ত বিচার হয়নি।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার ১ ফেব্রুয়ারি হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনবে ও বিচার সম্পন্ন করবে। একইসঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণ করে সাংবাদিক ও মতপ্রকাশকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।