Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাট, ইজারা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন!


৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:১৫

চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে গড়ে উঠেছে স্থায়ী দোকান ও বাণিজ্যিক হাট। বিদ্যালয় চলাকালীই সপ্তাহে দুই দিন বসছে এই হাট। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। শিক্ষকদের পাঠদানও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামে ৯২ শতক জমির ওপর ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে এ বিদ্যালয়ে ২৯৫ জন শিক্ষার্থী, আট জন শিক্ষক ও একজন নৈশ্যপ্রহরী কর্মরত। স্থানীয় কিছু ‘প্রভাবশালী’ ব্যবসায়ী এ বিদ্যালয়-সংলগ্ন বিদ্যালয়ের মাঠেই তৈরি করেছে স্থায়ী দোকান এবং বসিয়েছে বাণিজ্যিক হাট। দীর্ঘদিন ধরেই প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার করে বসছে এ হাট।

বিজ্ঞাপন

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাটের দিন দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকাররা ট্রাক ও শ্যালো মেশিনে চালিত অবৈধ যানবাহন নছিমন, করিমন ও আলমসাধু ভর্তি করে কাঁচামাল নিয়ে এসে বিদ্যালয়ের মাঠেই সেগুলো নামায়-ওঠায়। হাটে অস্থায়ী দোকানিরা কাঁচা তরিতরকারি ও বিভিন্ন মাল বিক্রি করেন। ফলে শিক্ষার্থীরা মাঠে অবস্থানরত বিভিন্ন যান ও বিক্রেতাদের ভিড়ের মধ্য দিয়ে কোনো রকমে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে। হাটের হট্টগোলের মধ্যে তাদের ক্লাস করতেও সমস্যা হয়। যে কারণে অনেক অভিভাবক হাটের দিনে তাদের সন্তানকে বিদ্যালয়ে যেতে দিতে চায় না।

স্কুল কর্তৃপক্ষও স্বীকার করছে, হাটের দিন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কমিই থাকে। বিষয়টি নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজর নেই বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে ব্যবসায়ীরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। ক্রেতারা দরদাম করে পণ্য কিনছে। এর মধ্যেই বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান। ক্রেতা-বিক্রেতাদের শোরগোলে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষকেরা কী পড়াচ্ছেন, তা শিক্ষার্থীদের বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে। মনোযোগ ধরে রাখাও কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের জন্য।

এদিকে, শ্রেণিকক্ষের পাশেই রয়েছে হাটের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। মাঠের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে ২৪টি পাকা দোকানঘর। বিদ্যালয়ের প্রায় ২০ শতক জমি দখল করে এসব দোকান অবৈধভাবে গড়ে তুলেছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি।

স্কুলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাদের ভাষ্য, সপ্তাহের সোম আর বৃহস্পতিবার স্কুলে আসতে মন চায় না। চারদিকের চিৎকার-চেঁচামেচি ও মাইকের শব্দে ঠিকমতো ক্লাস করতে পারি না। সপ্তাহের অন্য দিন মাঠ ফাঁকা থাকলেও হাটের ময়লা-আবর্জনার পচা গন্ধ থাকে সবসময়। ক্লাস করতে সমস্যা হয়, মাঠে খেলাধুলা করতেও কষ্ট হয়।

অভিভাবক আসমা খাতুন বললেন, ‘শিশুরা তো লেখাপড়া-খেলাধুলার মধ্যে দিয়েই শিখবে। স্কুলের মাঠ দখল করে দোকান তৈরি, বেচাকেনার জন্য নিয়মিত হাট বসানো এবং তা সরকারিভাবে ইজারার বন্দোবস্ত দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, জানা নেই আমার।’
আসমা খাতুনসহ আরও কয়েকজন অভিভাবক বলেন, হাটের কারণে বিদ্যালয়ের পরিবেশ একেবারেই পড়ালেখা বা খেলার উপযোগী নেই। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব জায়গা না থাকায় বিদ্যালয়ের মাঠকেই হাট দেখিয়ে ইজারা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের কোনো সীমানা প্রাচীর না থাকায় হাটকে কেন্দ্র করে কিছু ব্যবসায়ী বিদ্যালয়ের জমিতেই ২৪টি পাকা দোকানঘর তৈরি করে বসে আছে। গ্রামের অস্বাস্থ্যকর পানি এই বিদ্যালয়ের মাঠের একাংশে জমে জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। এসব কারণে বিদ্যালয়ের বলতে গেলে শিক্ষার পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে গেছে।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, খুলনা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক, চুয়ডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও দামুড়হুদা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো প্রতিকার মেলেনি।

বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আনিছুর রহমান শেখ বলেন, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানকার মাঠে হাট বসত বলে জেনেছি। এই হাটটি ইজারা দেওয়া হয় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে। ওখান থেকে হাটের নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে না দেওয়ায় ইজারাদাররা বিদ্যালয়ের মাঠেই হাট বসায়।

বর্তমানে এই হাটের ইজারাদার ইব্রাহিমপুর গ্রামের ওলিয়ারের ছেলে তমরেজ। জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা উপজেলা থেকে আট হাজার টাকায় হাট ডেকে নিয়েছি। আমাদের হাটের কোনো জায়গা দেখিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে এই জায়গাতেই হাট বসে আসতে দেখেছি। তাই এখানেই হাট বসাচ্ছি। উপজেলা প্রশাসন আমাদের হাটের জায়গা দেখিয়ে দিলে আমরা সেখানে চলে যাব। এতে কোনো সমস্যা হবে না।

দামুড়হুদা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত সাকী সালাম। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাট বসানোর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, আমি এখানে যোগ দেওয়ার পরই বিষয়টি জেনেছি। এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর অভিযোগপত্রও দিয়েছি। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মুনিম লিংকন সারাবাংলাকে বলেন, হাটের বিষয়ে একটি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই শুনানির পরও ইজারাদাররা সেখানেই হাট বসানো অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থায় উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহিউদ্দিনকে বিষয়টি তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি তদন্ত করেন। কিন্তু তদন্তের পর এ বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি।

চুয়াডাঙ্গা

বিজ্ঞাপন

সাগরে লঘুচাপ, কমছে তাপমাত্রা
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৩

ঢামেকে অভিযানে ২১ দালাল আটক
২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

আরো

সম্পর্কিত খবর