যেভাবেই হোক করোনা ঠেকাতে হবে, বিশেষ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী
৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৭:২২
ঢাকা: বিশ্বের ২৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস যেন কোনোভাবেই দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বিশেষ এক বৈঠক থেকে এ নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে করোনাভাইরাস নিয়ে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভা কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনাভাইরাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রী ২০/২৫ জনকে নিয়ে আলাদা একটি বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছে, যেভাবেই হোক, এই ভাইরাস যেন আমাদের দেশে ঢুকতে না পারে, সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে বৈঠকে অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহসহ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ উপস্থিত ছিলেন। তারা বৈঠকে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় দ্রুত ছড়ায়। এ কারণে চীনের উহান থেকে যে ৩১২ জন বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, তাদের ১৪ দিন পর্যন্ত ‘কোয়ারেনটাইন’ করে রাখা হয়েছে। তাদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষাও করা হয়েছে। তাতে তাদের শরীরে ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।
সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ১৪ দিন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সুপ্ত থাকতে পারে কারও শরীরে। সে কারণে চীন থেকে যারা বাংলাদেশে ফিরে এসেছে, তাদের যেন অবশ্যই ১৪ দিন পর্যন্ত আশকোনায় রাখা হয়।
এছাড়া পদ্মাসেতু ও কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্পগুলোতে কর্মরত যেসব শ্রমিক এখন চীনের উহানে রয়েছে, তারা যেন আপাতত দেশে ফিরতে না পারে, সে নির্দেশনাও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, যেসব চীনা কর্মী উহানে রয়েছে, তাদের আর বাংলাদেশে আসতে দেওয়া হবে না। তাদের ওয়ার্ক পারমিটও নবায়ন করা হবে না। এছাড়া মেগা প্রকল্পগুলোতে কর্মরত চীনা শ্রমিকদের যারা ১৮ জানুয়ারির পর বাংলাদেশে এসেছে, তাদেরও ‘কোয়ারেনটাইন’ করে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়গুলোও বৈঠকে অবগত করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। জানানো হয়, চীন থেকে আসা বাংলাদেশিদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে ‘কোয়ারেনটাইন’ করে রাখা হয়েছে। সেখানে তাদের থাকা-খাওয়াসহ স ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সচিব আরও জানান, চীন থেকে আরও ১৭১ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসতে চান। তবে চীন থেকে আসা পাইলটদের কোনো দেশ ভিসা দিতে চাচ্ছে না। এ কারণে বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে চার্টার্ড বিমান নিতে বলা হয়েছে। বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হকও এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্য দেশ থেকে যারা বাংলাদেশে যারা আসছেন, তাদেরও যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, অন্য দেশ হয়ে যারা আসছে, তাদের সেসব দেশেই খুব কঠোরভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তারপর পাঠানো হয়। তাই তাদের ক্ষেত্রে কিছুটা সুরক্ষা আমরা এমনিতেই পেয়ে যাই। তারপরও আমাদের এখানে পরীক্ষা করা হয়। তাছাড়া বাকিদের সবাইকেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড মেনে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়ে থাকে।
চীন থেকে যারা আসতে চায়, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা ঝুঁকিপূর্ণ হবে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এ ক্ষেত্রে খুব একটা ঝুঁকি নেই। কারণ চীন সরকার এটা নিশ্চিত করেছে যে তারা করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকা একজনকেও আসতে দেবে না। যেমন— বাংলাদেশ থেকে ৩১৬ জনের আসার কথা ছিল। কিন্তু চার জনকে তারা ছাড়েনি। তাদের জ্বর থাকায় তারা ওই চার জনকে আসতেই দেয়নি। এই ১৭১ জনের ক্ষেত্রেও চীন ছাড়পত্র দিলে তবেই তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।
ফাইল ছবি
করোনাভাইরাস করোনাভাইরাস ঠেকাতে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা