করোনাভাইরাস নিয়ে ৪ বিভ্রান্তি ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:৪৯
বিশ্বের প্রায় দুই ডজনেরও বেশি দেশের নতুন আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনাভাইরাস। যেটির উৎপত্তি হয়েছে চীন থেকে। এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে সাড়ে তিনশরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর সংক্রমণের শিকার হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ২৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে ঘোষণা করে। নতুন এ ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
করোনাভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়াসও দৃশ্যমান গোটা বিশ্বের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ছড়িয়ে পড়া বিভ্রান্তিকর ও বানোয়াট কল্প কথাগুলো।
গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি হিসেবে ঘোষণার পাশাপাশি সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানোম ঘেব্রেইয়েসাস এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন।
তিনি বলেন, ‘শুধু চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে এ ঘোষণা আসেনি, বরং বিশ্বের অন্যান্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশগুলো যারা এ সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রস্তুত নয়, সেসব দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাটাই প্রধান কারণ।’
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিষয়ে নানা বানোয়াট ও ভ্রান্ত তথ্যের মধ্যে আছে- ভাইরাসটি কোথা থেকে এসেছে, কীভাবে সংক্রমিত হল এবং কীভাবে তা মোকাবিলা করা উচিত। এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনগড়া কথাবার্তা ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে, যা রীতিমতো ভয়ঙ্কর চর্চা বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
করোনাভাইরাস নিয়ে এমন চারটি ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে ধোঁয়াশা স্পষ্ট করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। সেগুলো হলো—
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারীতা: অ্যান্টিবায়োটিক করোনাভাইরাস প্রতিরোধ হয় এরকম ধারণাও ছড়িয়ে পড়েছে সামাচিক যোগাযোগমাধ্যমে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ কোনো কাজে আসবে না, কেন না অ্যান্টিবায়োটিক শুধু ব্যাক্টেরিয়ার ওপর কাজ করে, ভাইরাসের ওপর নয়। তবে, কোনো কোনো রোগীর ওপর হাসপাতালে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হতে পারে যদি ভাইরাসটির পাশাপাশি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন থাকে।
ভেষজ প্রতিকার ও অন্যান্য বিকল্প ওষুধ নতুন এই ভাইরাসের চিকিৎসায় ফলপ্রসু: বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ এখনো সুপারিশ করা হয়নি।
তবে সংস্থাটি বলেছে, ভাইরাসে আক্রান্তদের রোগের লক্ষণ ও উপসর্গগুলো উপশমে এর চিকিৎসায় যথাযথ যত্ন নেওয়া উচিত। এছাড়া মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করা জরুরি। এছাড়া সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে গবেষণা চলছে। এগুলো ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে পরখ করে দেখা হবে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা পদ্ধতি খুঁজে বের করার গবেষণা ও টিকা তৈরির প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীদারদের সহায়তা করছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।
আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানো ও ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে সংস্থাটি ঘন-ঘন হাত ধোয়া, জ্বর বা কাশিতে আক্রান্ত যে কারও কাছাকাছি না যাওয়া এবং পশুজাত খাদ্যদ্রব্য কাচা বা অর্ধসিদ্ধ অবস্থায় না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
শুধু বয়স্করা আক্রান্ত হন করোনাভাইরাসে: যেকোনো বয়সের মানুষই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। তবে, বিশ্ব সাস্থ্যস্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যারা অ্যাজমা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অধিকতর ঝুঁকিতে।
পোষা প্রাণীদের থেকে ছড়াতে হতে পারে করোনাভাইরাস: পোষা প্রাণী যেমন- কুকুর বা বেড়াল এ ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ এখনো মেলেনি। তথাপি সংস্থাটি, পোষা প্রাণীর সংস্পর্শে আসার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এতে পোষ্য প্রাণীদের থেকে মানবদেহে যাওয়ার মতো পরিচিত ব্যাক্টেরিয়াগুলো প্রতিরোধ করা যাবে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা