Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আড়াই লাখ বিদেশি শ্রমিক বছরে নিয়ে যাচ্ছেন ২৬,৪০০ কোটি টাকা


৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:০৮

ঢাকা: বাংলাদেশে ন্যূনতম ২ লাখ ৫০ হাজার বিদেশি শ্রমিক কর্মরত আছেন। যারা বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ২৬ হাজার ৪০০ কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। একইসঙ্গে এই বিদেশি শ্রমিকেরা বছরে ১২ হাজার কোটি টাকার করও ফাঁকি দিচ্ছেন।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবি‘র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর ই খোদা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই গবেষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে কি পরিমাণ বিদেশি শ্রমিক কাজ করে সরকারি কোনো সংস্থার কাছেই এই হিসাব নেই এমন তথ্য দিয়ে টিআইবি বলছে, এই সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। দেশের একেকটি সংস্থা একেক ধরনের হিসাব দিচ্ছে। গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী দেশে, বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ৫ থেকে ১০ লাখ। এই শ্রমিকরা প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। যা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের প্রায় অর্ধেক।

সাবেক প্রবাসী ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ২০১৭ সালের ৮ অক্টোবর বলেছিলেন বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২ লাখ বিদেশি শ্রমিক বছরে ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, সাবেক অর্থমন্ত্রী ২০১৮ সালের ১৩ মে বলেছিলেন বিদেশি শ্রমিকরা বাংলাদেশ থেকে বছরে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বব্যাংক ২০১৭ সালে বলেছে এই অর্থের পরিমাণ ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০১৭ থেকে ১৮ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বিদেশিরা শুধু বৈধভাবে নিয়ে যাচ্ছেন বছরে ৪৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বিদেশি শ্রমিকদের বেতনের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিদেশি শ্রমিকদের ন্যুনতম গড় মাসিক বেতন ১ দশমিক ৫ হাজার মার্কিন ডলার বা ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। তাদের ন্যুনতম বার্ষিক আয় ৪ দশমিক ৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ ৩ লাখ ৮২ হাজার টাকা। বিদেশি এই শ্রমিকরা বাংলাদেশ সরকারকে বছরে ১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দেশে বৈধ বিদেশি শ্রমিকের সংখ্যা ৮৫ হাজার ৪৮৬ জন। অথচ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাত্র ৯ হাজার ৫০০ জন বিদেশি শ্রমিক আয়কর দিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশে বসবাসকারী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন। আবার যারা আয়কর দিচ্ছেন তাদের একটা বড় অংশই প্রকৃত বেতন কমিয়ে আয়কর দিচ্ছেন।

টিআইবি বলছে, প্রতিবছর বাংলাদেশে ট্যুরিষ্ট ভিসায় আসা বিদেশিদের একটা বড় অংশ আর নিজ দেশে ফেরত না গিয়ে এদেশে অবৈধভাবে কাজ করেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে আবার ট্যুরিষ্ট ভিসায় নতুন করে আসেন। এই সব বিদেশিরা দেশ থেকে অর্থ পাচারের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছেন বলে জানায় টিআইবি।

টিআইবি’র এই প্রতিবেদন আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মূলত শ্রম অভিবাসীর যোগানদাতা হিসাবে পরিচিত হলেও বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি নাগরিক কাজ করে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ থেকেও বড় অংকের রেমিট্যান্স বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি পোষাকখাতে সবচেয়ে বেশি বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন। এরপর রয়েছে টেক্সটাইল, বায়িং হাউজ, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, মোবাইল ফোন কোম্পানি ইত্যাদি। এসব খাতে ভারতের শ্রমিকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এরপর শ্রীলঙ্কা ও চীনসহ ৪৪ দেশের শ্রমিক রয়েছেন। অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, নরওয়ে, নাইজেরিয়া।

টিআইবির প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, বিদেশি কর্মীদের ভিসা সুপারিশপত্র, নিরাপত্তা ছাড়পত্র, কর্মানুমতিপত্র এবং ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি সংক্রান্ত সেবা দিতে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করা। বিদেশি কর্মীদের ন্যূনতম বেতন সীমা হালনাগাদ করা ইত্যাদি।

খবর টিআইবি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর