৫ বছর আগে জব্দ ৩৭০ লিটার তরল কোকেন মাটিচাপা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে জব্দ হওয়া বলিভিয়া থেকে আসা কোকেনের চালান ধ্বংস করেছে র্যাব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে ৩৭০ লিটার কোকেন আদালতের নির্দেশে মাটিচাপা দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশে আসা কোকেনের প্রথম চালান ছিল সেটি।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গায় র্যাব-৭ এর কার্যালয়ে মামলা পরিচালনার জন্য জব্দ আলামত রেখে বাকি কোকেন ধ্বংস করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি, র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
২০১৫ সালের ৬ জুন চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের তৎকালীন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এস এম তানভির আরাফাতের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কোকেন সন্দেহে চট্টগ্রাম বন্দরে সূর্যমুখী তেলের চালান জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এরপর ২৭ জুন তেলের চালানের ১০৭টি ড্রামের মধ্যে একটি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। বলিভিয়া থেকে আসা চালানটির প্রতিটি ড্রামে ১৮৫ কেজি করে সূর্যমুখী তেল ছিল। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের রাসায়নিক পরীক্ষাগারসহ চারটি পরীক্ষাগারে তেলের চালানের দু’টি ড্রামের নমুনায় কোকেন শনাক্ত হয়। তদন্তে বেরিয়ে আসে, চালানটি উরুগুয়ের মন্টিভিডিও থেকে জাহাজীকরণ করা হয়েছিল। পরে তা সিঙ্গাপুর হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।
এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্ত করে র্যাব যে ১০ জনকে অভিযুক্ত করেছে, তারা হলেন— চালানের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের খানজাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ ও তার ভাই মোস্তাক আহম্মদ, কসকো-লাদেশ শিপিং লাইনসের ব্যবস্থাপক এ কে এম আজাদ, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদী আলম, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল, প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা সোহেল, পোশাক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, লন্ডনপ্রবাসী চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের ফজলুর রহমান ও মৌলভীবাজারের বকুল মিয়া।
কোকেন ধ্বংস করা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোকেনের গন্তব্য কোথায় ছিল, সেটি এখনও অজানা।
‘এই কোকেন চালানটি দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ থেকে ভোজ্যতেলের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে এসেছিল। এটির গন্তব্য কোথায় ছিল, যারা নিয়ে এসেছে তারাই জানত না। এটা আমাদের দেশের জন্য নাকি অন্য কোনো দেশের জন্য এসেছিল, এটা এখনো আমাদের কাছে ক্লিয়ার নয়। তবে যারা জড়িত তাদের বেশিরভাগকেই আমরা গ্রেফতার করেছি, তারা জেলহাজতে রয়েছেন এবং আমরা মনে করি যথাযোগ্য শাস্তি তারা পাবেন এই মাদক চালানের জন্য,’— বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
তবে র্যাব প্রধান বেনজীর আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, কোকেনের চালানের সঙ্গে জড়িত দেশি-বিদেশি উভয় চক্রকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জন যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে দেশে আনার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, ‘ওই দু’জনকেও (লন্ডনপ্রবাসী) আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সাকসেসফুল হতে পারিনি। এটা আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রটোকলের বিষয়। এ দুজন ছাড়া বাকিদের আমরা গ্রেফতার করেছি। তারা সবাই কারাগারে আছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান কোকেন ধ্বংস করার সময় উপস্থিত ছিলেন। র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, হাবিবুর রহমান, ফরিদুল হক খান ও পীর ফজলুর রহমান এবং চট্টগ্রাম-১১ আসনের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ, র্যাবের মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক এবং সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।