বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করছে: প্রধানমন্ত্রী
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:২৯
জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে এবং প্রভাবমুক্ত থেকে বিচারকার্য পরিচালনা করা হচ্ছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে সরকারি দলের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণার তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। ইতালি সফরে থাকায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরটি টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আইনের শাসন, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করে বিচার বিভাগ জনগণের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। আমরা জনগণের মাঝে এ বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকৃত আসামিরা যাতে সাজা পায় এবং নিরপরাধীরা যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে বর্তমান সরকার সজাগ রয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা বিচার বিভাগে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছি।’
তিনি বলেন, ‘অপরাধীর কোনো দল নেই তার পরিচয় কেবলই অপরাধী এবং অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন তার বিচার হবেই।’
প্রধানমন্ত্রী মামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৬ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৯ (২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) যার বিপরীতে কর্মরত বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল। এরইমধ্যে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৬ জন, হাইকোর্ট বিভাগে ৩৭ বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আদালতে ৭৬৮ জন সহকারী জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৩তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে ১০০ জন সহকারী জজ নিয়েগের জন্য লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ১৪তম বিজেএস পরীক্ষার মাধ্যমে আরও ১০০ জন সহকারী জজ নিয়োগ এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে ৮৮৬টি পদ সৃজনের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হলে দ্রুত নিষ্পত্তিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।’
সংসদ নেতা আরও বলেন, ‘এজলাস স্বল্পতা দূর করে সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ব্যবহার করে বিচার কাজে গতিশীলতা আনায়নের আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অধস্থন আদালতের জন্য ৪২টি জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে।এর মধ্যে ২৭টি জেলায় সম্পূর্ণ ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এবং ১৪টি জেলায় ভবন নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায় রয়েছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আনুষঙ্গিক সুবিধাদিসহ নতুন ১২তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগ ডিজিটাইজেশন করার লক্ষ্যে আমরা ই-জুডিশিয়ারি শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ৪ বছর মেয়াদি প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ২ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আদালতে মামলার বিচার নিষ্পত্তির পাশাপাশি নতুন মামলা দায়েরের হার কমাতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এই পদ্ধতিকে ফলপ্রসূ করতে সারাদেশে জেলা জজ আদালতে একজন করে সরকারি সিনিয়র সহকারী জজ পর্যায়ের বিচারককে লিগ্যাল এইড অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। এরইমধ্যে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সারাদেশে ২৮ হাজার ৯৫৫ টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। প্রচলিত ব্যবস্থার বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পদ্ধতি করার জন্য জাপানের সঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। অসহায় ও দুস্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এরইমধ্যে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে ৪ লাখ ৮৭ হাজার ১৪ জনকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।’
সংসদ নেতা বলেন, ‘হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং জঙ্গিবাদকে উসকে দেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছিল। হলি আর্টিজান মামলার আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করে বিচার নিষ্পত্তির মাধ্যমে এ চক্রান্ত রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল ছাত্রী সুমাইয়া রিশা হত্যা মামলা, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দিয়া খানম ও আব্দুল করিম রাজীবের মামলা, গাইবান্ধা সংসদ সদস্য হত্যাসহ বহুল আলোচিত মামলার নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বরগুনার আলোচিত রিফাত হত্যা মামলার বিচার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে এবং বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগ গঠন করেছে।’