Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান


৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:৫৯

ঢাকা: বিশ্বজুড়ে এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। চীনের উহান থেকে ২৫টি দেশে ছড়িয়েছে এই ভাইরাস। আশঙ্কা রয়েছে, ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। তবে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ নিয়ে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ করেছেন। আহ্বান জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ‘নানা ধরনের গুজব’ থেকে দূরে থাকতে।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত আইইডিসিআরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান তিনি।

ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ধরনের রিউমার (গুজব) হচ্ছে। অনেক ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে বলা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত আলাদাভাবে এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি বের হয়নি। আর তাই এ কারণে এ ধরনের প্রচার-প্রচারণায় মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয়, আতঙ্কিত না হয়।

চীন থেকে ফিরে আসা নাগরিকরা সবাই সুস্থ আছে জানিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, ২১ জানুয়ারি থেকে চীন থেকে আসা ৬ হাজার ৭৮৯ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ ৩৯ জনের নমুনাও পরীক্ষা করা হয়েছে। তাদের কারও মধ্যেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় চীন থেকে আসা ৮৩৭ যাত্রীকেও স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তাদের কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও, সোমবার রাতে চীনফেরত এক বাংলাদেশিকে হজ ক্যাম্প থেকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথাব্যথা ও কাশি আছে। তবে জ্বর নেই। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা জানতে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, চীনের উহানফেরত ৩১২ জনের মধ্যে যাদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল, তাদের মধ্যে এক শিশু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় পরিবারের সদস্যদেরসহ তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) পাঠানো হয়েছে। সিএমএইচে আগে আরও তিনটি পরিবারকে রাখা হয়েছিল। সেখানে কেউই অসুস্থ নন। যে শিশুটির জ্বর এসেছে তার ক্ষেত্রেও আমরা করোনাভাইরাস বলে সন্দেহ করছি না। যেহেতু আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছি সেজন্য ‘বেটার ট্রিটমেন্টের’ জন্য তাকে সেখানে পাঠিয়েছি। ওই শিশুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষার ফল এখনও পাওয়া যায়নি। সিএমএইচে এখন উহানফেরত ১১ জন আছেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আছেন ৩ জন। বাকি ২৯৮ জন আছেন আশকোনায়।

বিজ্ঞাপন

করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতার অংশ হিসেবে বিমানবন্দরের পাশাপাশি দেশের স্থলবন্দরগুলোতেও বিদেশফেরত যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত বিমানবন্দরে চীন থেকে আসা ৭ হাজার ২৮৪ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। তাদের কারও শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআর। এ দিন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া হটলাইনে যোগাযোগ করেছেন ৯৫৩ জন, যেখানে ৬৭৬ জন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত তথ্য জানতে যোগাযোগ করেছেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি ৪৩ জনকে সেবাদানের বিষয়ে জানিয়েছে।

স্ক্রিনিং বিষয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, স্ক্রিনিং মানেই সবাইকে ডেস্কে নিয়ে গিয়ে তা করা হবে তা নয়। সবাইকে একটি ফর্ম দেয়া হয়, তার ভিত্তিতে আলাদাভাবে করা হয়। আর যারা আসছে সবাই এই স্ক্রিনিং এর মধ্যে দিয়ে যায়। স্থলবন্দরগুলোও স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। চীন ছাড়া অন্য দেশে এখনো সেইভাবে ছড়ায়নি করোনাভাইরাস। চীন থেকে যদি কেউ অন্য দেশ হয়ে বাংলাদেশে আসে আমরা তাদের পরীক্ষা করছি। কিন্তু রোগটি অন্য দেশে এখনও ছড়ায়নি বলে আমরা সবাইকে স্ক্রিনিং করছি না। তবে ভারত যদি এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় তাহলে ভারত থেকে আসা যাত্রীদেরও স্ক্রিনিং করা হবে। আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

বাংলাদেশে অবস্থানকারী চীনা নাগরিকদের ব্যাপারে আইইডিসিআর অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে চায়। এ কারণে তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানান ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলেন, যেহেতু তারা অন্য দেশের নাগরিক, সে কারণে তারা কোথায় থাকেন জানতে পারলে আমরা সরাসরি যোগাযোগ করে তথ্য নিতে পারব।

করোনাভাইরাসের চিকিৎসা বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের সাধারণ সর্দি-কাশির চিকিৎসা দেওয়া হয়। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির অন্য কোনো রোগ থাকলে পাশাপাশি সেটার চিকিৎসাও চলে।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা-ব্যবস্থা বিষয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) পরীক্ষার সুযোগ কেবল আইইডিসিআরেই আছে। সে কারণে কারও মধ্যে সংক্রমণের সন্দেহ দেখা গেলে আইইডিসিআরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে আইইডিসিআর পিসিআর পরীক্ষা করে নিশ্চিত হচ্ছে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী ওই নমুনা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পাঠানো হচ্ছে পুনঃপরীক্ষার জন্য।

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসী বলেন, সীমান্তের কাছে যে এলাকাগুলো সেখানেও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটা সত্য যে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আবার প্রতিটি স্থলবন্দর দিয়েই মানুষ চলাচল করে না। গত ১৪ দিনে যেসব চীনা নাগরিক এসেছে, তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি। সীমান্তবর্তী হাসপাতালগুলো সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে।

আইইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, সোমবার রাতে চীনফেরত এক বাংলাদেশিকে হজক্যাম্প থেকে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথাব্যথা ও কাশি আছে। তবে জ্বর নেই। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, তা জানতে নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআরে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নভেল করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। এ পর্যন্ত ২৫ দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ধরা পড়েছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়তে থাকায় এবং মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩০ জানুয়ারি বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ৪৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চীনের বাইরে ফিলিপিন ও হংকংয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া বাকি ৪৮৮ জনই চীনের নাগরিক।

অনলাইন গুজব করোনাভাইরাস গুজব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর