পিঠা উৎসবে ব্যতিক্রমী হিম আড্ডা চবিতে
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২৩:৪৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: আবহমান গ্রাম বাংলার অন্যতম সংস্কৃতি হলো পিঠা উৎসব। এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে বর্ণিল আয়োজনে পিঠা পার্বন ও হিম আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসবের আয়োজন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইআর) শিক্ষার্থীরা। পিঠা উৎসবে আইইআরের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা নিজেদের হাতে তৈরি করেছেন বাহারি পিঠার ১০টি স্টল।
‘শীতের কুয়াশায় জমবে মেলা, পিঠা উৎসবে সারাবেলা’ স্লোগানে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের সামনে সক্রেটিস চত্বরে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ।
পিঠা উৎসবে যেসব পিঠা প্রদর্শন করা হয় সেগুলো হলো— ফুলঝুড়ি, পাকন পিঠা, লেয়ার পুডিং, ক্যারামেল পুডিং, বেণী পিঠা, নারকেল পুলি, ডিম কুকিজ, পাটি সাপটা, তালের পিঠা, ঝাল পিঠা, কলার পিঠাসহ প্রায় ৮০ রকমের পিঠা।
শীতকে বরণ করে নিতে হাজির হয় পিঠা উৎসব। শীতকালে পিঠা উৎসবে মেঠে উঠা বাঙালির চিরায়ত রূপ। এই সময়টাতে টাটকা চালে তৈরি করা হয় হরেক রকমের পিঠা। শীতের সকালে ঠাণ্ডা হিম বাতাসে উৎসবের আমেজ আইইআরের শিক্ষার্থীরা পেল নতুন মাত্রা।
সকাল থেকেই হরেক রকমের পিঠার সমাহার ঘটিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় আইইআর শিক্ষার্থীরা। পিঠা উৎসবে আইইআরের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে আইইআর প্রাঙ্গণ।
আইইআরের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী উম্মে সাদিয়া মিতুর তৈরি ‘হিম হাওয়া’ পিঠা উৎসবে সবচেয়ে বড় স্টল। ২৮ রকমের পিঠা ছিল এই স্টলে। তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী মিথিলা হকের তৈরি ‘নেমন্তন্ন’ স্টলও বাহারি পিঠার পসরা সাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ‘এই স্টলের অর্জিত সামাজিক কাজে ব্যয় করা হবে’— এমন ঘোষণা ছিল স্টলটির সামনে।
এদিকে, ঐতিহ্যবাহী আর বাহারি সব পিঠার স্বাদ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিঠা পার্বণে অংশ নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আইইআর শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও উপভোগ করেন। বাউল গান, নাচের সঙ্গে কবিতা পাঠের মাধ্যমে পুরো উৎসবকে প্রাণবন্ত করে তোলেন শিক্ষার্থীরা।
পিঠা উৎসবে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্রী পারভিন আক্তার। তিনি বলেন, আমি প্রায় প্রতিটি পিঠা স্টল থেকেই পিঠার স্বাদ নিয়েছি। এসব পিঠার স্বাদ পেয়ে মায়ের হাতে তৈরি পিঠার কথা মনে পড়ে গেল।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই সময়ে বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকে। ফলে তারা বাড়িতে যেতে পারেন না। মায়ের হাতের তৈরি শীতের পিঠার স্বাদও নিতে পারেন না। এই সময়ে আইইআরের শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এই শীতের পিঠা উৎসব ও হিম আড্ডা সত্যিই প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ।
পিঠা উৎসবের আয়োজকদের অন্যতম ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. সাব্বির জানান, ঋতুবৈচিত্র্যের এ দেশে শীত আমাদের অনেকের কাছেই প্রিয়। ঐতিহ্যগত কারণে এই ঋতুর সঙ্গে পিঠার অন্যরকম যোগসূত্র আছে। তাই শীতকে আমরা বরণ করে নিয়েছি পিঠা উৎসবের মাধ্যমে।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) শিক্ষক রাজীব আহমেদ ফয়সাল বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর এই পিঠা পার্বণ আয়োজন করে থাকেন। এই পিঠা পার্বণ পালন করা আমাদের সংস্কৃতিকে লালন করা। গ্রাম বাংলার সংস্কৃতিকে ধরে রাখা। আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে ভুলে যায়নি— এটা আমাদের মূল বিষয়।
পিঠা উৎসবে উপস্থিত ছিলেন আইইআরের শিক্ষক হাসান তৌফিক ইমাম, তাসনিম মুশাররাত, সুস্মিতা দত্ত, জেরিন আক্তার, আমানুল্লাহসহ অন্যরা।