করোনাভাইরাসের টাইমলাইন
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৮:৫৯
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে চীনে ৫৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৮ হাজার। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায়, এমনকি মধ্য ও দূর প্রাচ্যেও। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানুয়ারির ৩০ তারিখে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি করেছে। চলুন এক নজরে দেখে আসা যাক করোনাভাইরাসের টাইমলাইন
ডিসেম্বর ৩১
গত বছরের শেষ দিনে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী ১ কোটি ১০ লাখ মানুষের শহর উহান থেকে কয়েকজন অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউমোনিয়ায় ভোগা রোগীর তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) জানানো হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এসব রোগীর মধ্যে কয়েকজন হুয়ানানের সামুদ্রিক মাছের আড়তে কাজ করতেন।
জানুয়ারি ১
এই দশকের প্রথম দিনেই ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল সন্দেহে হুয়ানানের ওই সামুদ্রিক মাছের আড়ত বন্ধ করে দেওয়া হয়। অজানা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪০ অতিক্রম করে।
জানুয়ারি ৫
সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) ভাইরাসের সঙ্গে এই অজানা ভাইরাসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানায় চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।
জানুয়ারি ৭
চীনের পক্ষ থেকে ডব্লিউএইচও’র বরাতে ঘোষণা করা হয়, অজানা ভাইরাসকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। এর নাম নভেল করোনাভাইরাস। একে প্রকাশ করা হবে 2019-nCoV নামে। এই নভেল ভাইরাসটি করোনাভাইরাস গোত্রের। এর কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা এবং সাধারণ সর্দি-কাশির মতো উপসর্গ দেখা দেবে। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়াতে পারে।
জানুয়ারি ৯
করোনাভাইরাসে চীনে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওই হুয়াননের সামুদ্রিক মাছের আড়ত থেকে মাছ কেনা এক ৬১ বছরের বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
জানুয়ারি ১১
দুই দিনের মাথায় করোনাভাইরাসে ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর তথ্য চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নেয়।
জানুয়ারি ১৩
চীনের বাইরে থাইল্যান্ডে এই প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত একজনকে শনাক্ত করার কথা জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
জানুয়ারি ১৬
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উহান ফেরত একজন জাপানি নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
জানুয়ারি ১৭
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের তিনটি বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিন বসিয়ে আগতদের পরীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়।
এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও তাইওয়ানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়।
জানুয়ারি ২০
চীনে তৃতীয় মৃত্যু এবং আক্রান্ত ২০০ জনের কথা জানা যায়। আরও জানা যায়, হুবেই প্রদেশের বাইরে বেইজিং, সাংহাই, শেনজেনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিন চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সিসিটিভিতে একজন বিশেষজ্ঞ জানান, মানুষ থেকে মানুষে এই ভাইরাস শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। চন্দ্র নববর্ষকে সামনে রেখে চীনে জড়ো হতে থাকা নাগরিকদের মধ্যে ওই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
এশিয়ার দেশগুলোতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সকল বন্দরে স্ক্রিনিংয়ের বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
জানুয়ারি ২২
চীনে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ১৭-তে দাঁড়ায়। আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছায় ৫৫০-এ। ইউরোপের অনেক দেশে উহানফেরত ফ্লাইটে বিশেষ নজরদারি শুরু করা হয়।
জানুয়ারি ২৩
উহান শহরকে কার্যত কোয়ারেনটাইন করে রাখা হয়। উহানের সঙ্গে পুরো চীনের বিমান ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইরকম নির্দেশনা জারি করা হয় হুবেই প্রদেশের জিয়ান্তাও ও চিবি শহরের জন্য।
এদিনই ডব্লিউএইচও জানায়, এখনো করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি করার সময় আসেনি।
জানুয়ারি ২৪
চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬-এ। আক্রান্ত হয় ৮৩০ জন। উহান, জিয়ান্তাও, চিবি শহরের পাশাপাশি হুবেই প্রদেশের আরও ১৩ শহরকে ‘লকডডাউন’ করে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। যার ফলে, ৪ কোটি ১০ লাখ মানুষ কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
চীনের সব জনপ্রিয় ভ্রমণকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
জানুয়ারি ২৫
সম্পূর্ণ হুবেই প্রদেশকে ‘লকডডাউন’ করে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে চন্দ্র নববর্ষ উপলক্ষে চীনে সব আয়োজন স্থগিত করা হয়। পাশাপাশি হংকংয়ে করোনাভাইরাস আতঙ্কে নববর্ষের উৎসব স্থগিত এবং চীনের মূলভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ওই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল।
জানুয়ারি ২৬
চীনে মৃতের সংখ্যা ৫৬ এবং আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজারে পৌঁছে।
জানুয়ারি ২৭
চীনে মৃতের সংখ্যা একশ অতিক্রম করে। এদিন ১০৬ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে চীন কর্তৃপক্ষ, এর মধ্যে কেবল হুবেই প্রদেশেই একশ জন মারা গেছেন বলে জানায় দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন। আক্রান্ত হয় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি।
জানুয়ারি ৩০
চীনে মৃতের সংখ্যা ১৭০ এবং আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আট হাজারে পৌঁছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি করে।
ভারত ও ফিলিপাইনে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।
জানুয়ারি ৩১
একমাসের মাথায় চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় দশ হাজারে। নতুন করে রাশিয়া, স্পেন, সুইডেন ও যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।
ফেব্রুয়ারি ১
চীনে মৃতের সংখ্যা ২৬০ এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজারে পৌঁছায়। নতুন করে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।
ফেব্রুয়ারি ২
চীনের বাইরে ফিলিপাইনে প্রথম করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ফিলিপাইনে মৃত চীনা নাগরিক উহান থেকে ফিরেছিলেন।
ফেব্রুয়ারি ৩
চীনে মৃতের সংখ্যা ৫৭ জন বেড়ে ৩৬১-তে পৌঁছায়। আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ হাজারেরও বেশি।
ফেব্রুয়ারি ৪
চীনে করোনাভাইরাসে ৪২৫ জন মারা যায়। আক্রান্ত হয় প্রায় ২০ হাজার ৫০০। হংকংয়ে আরও একজনের মৃত্যুতে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা হয় ৪২৭। এদিকে উহান থেকে বেলজিয়ামে যাওয়া আরও একজনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
ফেব্রুয়ারি ৫
চীনে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯০-এ। আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪ হাজারের বেশিতে। উহান থেকে বিশেষ ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়।
ফেব্রুয়ারি ৬
চীনে মৃতের সংখ্যা ৫৬৩-এ দাঁড়ায়। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজারের বেশি।