Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ


৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:৫০

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের কুলাউড়া শ্রীমঙ্গল অঞ্চলে কর্মরত এই ব্যক্তি এলসিডাব্লিওম্যান পদে কর্মরত। তার নাম রবিউল আউয়াল। রেলওয়ের মূল খুঁটি থেকে প্লাটফর্মের দোকান, রেললাইনের পাশে বস্তিগুলোতে অবৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে বছরের পর বছর ধরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে জংশনে বিদ্যুৎ বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা রবিউল আওয়াল অবৈধ এসব বিদ্যুৎ সংযোগের মূল হোতা। প্রতি মাসে তিনি নিজে কলোনির সব অবৈধ সংযোগ ব্যাবহারকারীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল সংগ্রহ করেন। ওইসব অবৈধ সংযোগ থেকে মাসে ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা পর্যন্ত বিল নেওয়া হয়। এভাবে প্রতিমাসে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু এ চক্রের প্রধান রবিউল আউয়াল। আর অতিরিক্ত ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করছে খোদ রেল কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

কলোনি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রেলের নিজস্ব বাসা ছাড়াও সেখানে অনেক অবৈধ বাসাবাড়ি-দোকানপাট গড়ে উঠেছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনা ও দোকানপাট এবং বেকারিতে অবৈধ সংযোগ নেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের নিরাপত্তা বিভাগের এক কর্মচারী জানান, অবৈধ গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহারের পাশাপাশি তাদের বাড়িতে নিয়মিত বৈদ্যুতিক চুলা (হিটার) ব্যবহার করে। রেলওয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের লোকেরা এসব অবৈধ সংযোগের সঙ্গে জড়িত।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আমিন মিয়া বলেন, ‘বিদ্যুৎ ছাড়া কীভাবে চলব? তাই বিদ্যুৎ বিভাগের লোক দিয়ে বাসায় বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছি। মাসে ছয়শ টাকা দিতে হয়।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, রেলওয়ে কুলাউড়া-শ্রীমঙ্গল জোনের বিদ্যুৎ বিভাগের এল সি ডাব্লিও ম্যান রবিউল আওয়াল রেলওয়ে শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আর রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাব ব্যবহার করেই বছরের পর বছর ধরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। অথচ প্রতিমাসে রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিকে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কারণে লাখ লাখ টাকা অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে।

সরেজমিন রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, রেলওয়ে বিদ্যুতের মূল লাইন (খুঁটি) থেকে অবৈধভাবে লাইন টেনে রেলওয়ে প্লাটফর্মের দোকানসহ পাশের বস্তি এমনকি রেলস্টেশনের সন্নিকটে নতুন বাজার সোনার বাংলা মার্কেট এরিয়া বস্তি আশেপাশের প্রায় সাতটি বাড়িতে অবৈধভাবে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

বস্তির অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারী সালমা বেগম বলেন, ‘আমাদের মিটার নেই। আমরা সরকারি লাইন ব্যবহার করি আর প্রতিমাসে রবিউল স্যারকে পাঁচশ টাকা করে দিই।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু আমরা না। এই বস্তির বেশিরভাগ বাড়িতেই সরকারি লাইন ব্যবহার করা হয় আর রবিউল স্যার বিল নেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ে প্লাটফর্মের এক দোকানদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রতি মাসে বিল দিই দুই হাজার টাকা। রবিউল আউয়াল আমাদের কাছ থেকে এই বিল নেন।’

এ প্রসঙ্গে জানতে বিদ্যুৎ বিভাগের রবিউল আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সারাবাংলার এ প্রতিনিধির কাছে অবৈধ সংযোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে প্রতিমাসে দুই তিন লাখ টাকা আয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘এ সেক্টর থেকে প্রতি মাসে ২০/২৫ হাজার টাকা পাই। সেই টাকা বিভিন্ন বসদের পেছনে খরচ করতে হয়।’

অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে রবিউল আউয়াল। এই নিয়োগ বাণিজ্য থেকে অর্ধেক কমিশনও পান তিনি। জানতে চাইলে রবিউল আউয়াল সারাবাংলাকে জানান, রেল বিভাগের দুইজনকে তিনি কন্ট্রাকে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন।

নিয়োগ বাণিজ্যের সত্যতা অনুসন্ধান করতে তার মাধ্যমে চাকরি হয়েছে এমন একটি লোকের বাড়িতে পৌঁছে যান এ প্রতিবেদক। শ্রীমঙ্গল সাতগাঁও এলাকার শাজাহান মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান। একসময় একটি মাদ্রাসায় চাকরি করতেন তিনি।রেলওয়ে কোয়ার্টার আর মিজানের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ার সুবাধে সাতগাঁও রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহিমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ভালো সম্পর্ক রয়েছে মিজানের পরিবারের। সেই সূত্রে স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহিম এর মাধ্যমে রবিউল আউয়ালের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকায় চুক্তি হয় মিজানের। পদবি রেল বিভাগের কেরানি হিসেবে।

গত দুই বছর হয় চট্টগ্রামে রেল বিভাগে কেরানি পদে চাকরি করছেন মিজান। সাতগাঁও স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সারাবাংলাকে বলেন, ‘রবিউল আমাকে বলেছে মৌলভীবাজার জেলায় চারজন লোক নেওয়া হবে কেরানি পদে। আমাকে লোক দেন। তখন আমি এ বিষয় নিয়ে মিজানের বাবার সঙ্গে কথা বলি।’

স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত যতদূর জানি মিজানের পরিবার খুব দরিদ্র, সুদে টাকা এনে এরইমধ্যে রবিউল আউয়ালের চুক্তির বেশিরভাগ টাকা পরিশোধ করেছে মিজানের বাবা ইমাম শাজাহান মিয়া।’

স্টেশন মাস্টার আরও বলেন, ‘আর বড় জোর বিশ ত্রিশ হাজার টাকা বাকি আছে।’ একপর্যায়ে এ বিষয়ে রবিউলের সঙ্গে আলাপ না করার জন্য অনুরোধ করেন সাতগাঁও স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহিম। তিনি মিজানের নিয়োগে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমার মাধ্যমেই মিজানকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চুক্তি হয় রবিউলের সঙ্গে।’

এদিকে চট্টগ্রামে কেরানি পদে কর্মরত মিজানের সঙ্গেs মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মিজান সারাবাংলাকে জানায়, রবিউল আমার সঙ্গে একাধিকবার দেখা করেছে এবং চাকরি পাইয়ে দেবে বলে দশ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু আমি রাজি হইনি। আমার চাকরি আমার যোগ্যতায় হয়েছে।’

এ বিষয়ে রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী শ্রীমঙ্গল-আখাউড়া জোনের দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আল আমিনের মুঠোফোনে তিন দিন চেষ্টা করলেও ফোন রিসিভ করেননি তিনি।

এ বিষয়ে রেলওয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রদীপ কুমার সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘রবিউলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখব। বিদ্যুতের বিষয়টি যেহেতু আমার দায়িত্বে তাই কেউ দুর্নীতি করলে ছাড় দেওয়া হবে না। আর রবিউলের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের যে অভিযোগ উঠেছে সেটিও কর্তৃপক্ষকে জানাব।’

তবে ওই কর্মকর্তা জানান, তিনি ছুটিতে আছে। ছুটি শেষ হলে এ বিষয়ে তদন্ত করবেন।

দুর্নীতি দোকান রেলওয়ের বিদ্যুৎ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর