ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারকে বুঝতে বুঝতেই সময় শেষ হয়ে যাবে বলে নিজের দলেরই সমালোচনা করলেন বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও যুবদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। রাজধানীর সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল এবং অনেকেই আওয়ামী লীগ প্রধানের ইচ্ছা পূরণে ব্যস্ত। তাই এসব সমস্যা চিহ্ণিত করা জরুরী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উদ্যোগে সিটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বনাম ভোটের অধিকার শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলাল বলেন, ‘এ নির্বাচনে আমার একটি বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের একটি ওয়ার্ডে, আমাদের একজন সমর্থিত প্রার্থী ভোটের চারদিন আগে থেকেই গায়েব হয়েছিলে। তাকে ও তার পরিবারকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক প্রধান জোর করে থাইল্যান্ড পাঠিয়ে দিয়েছে। এটা কোনো পত্রিকায় আসেনি বা কেউ শোনেন নি। কিন্তু আমি সাক্ষী।’
ভোটের দিনের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে যুবদলের সাবেক এ সভাপতি বলেন, ইভিএম মেশিন নষ্ট, আমাদের তাবিথ আউয়াল এর মা কে ৪ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে হয়েছে অথচ লাইনে আর কোন ভোটারও নেই।
‘যে নির্বাচনে সিইসির হাতের আঙ্গুলের ছাপ মেলেনা, ড. কামালের মতো মানুষের হাতের আঙ্গুলের ছাপ মেলে না। এদেশের বীরমুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মত মানুষের হাতের আঙ্গুলের ছাপ মেলে না। সেই ইভিএমে এই ভোট করতে হবে আর তা করেও দেখিয়েছে নির্বাচন কমিশন।’ যোগ করেন সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
তিনি বলেন, এই নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি সম্পর্কে তারা আবার মজার মজার তথ্য দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন শীত এবং যানবাহনের অভাবে ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। আর তথ্যমন্ত্রী বলেছেন প্যারিসের হামলার জন্য বিএনপি দায়ী তেমনি ভোটার উপস্থিতির জন্য বিএনপিই দায়ী। নির্বাচন কমিশনের সচিব বলেছেন, ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। আবার পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেছেন, সরকারের উপর আস্থা আছেই বলেই ভোটাররা ভোট দিতে যাননি।
বিএনপির এ নেতা বলেন, মোহাম্মদপুরের এক কেন্দ্রে আনসার ও পুলিশ ছাড়া আর কেউ ছিলনা। কিন্তু দিন শেষে সেখানে ফলাফল ঘোষণা করা হলো পনেরশো ভোট কাস্ট হয়েছে। এই ইভিএম-এর কারণে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের ফলাফল গণনার ওখানে আমি ছিলাম। ঠিক সোয়া পাঁচটায় উত্তর সিটি করপোরেশনের ফল ঘোষণা শুরু হল। হঠাৎ মাগরিবের নামাজের পরপরই ঘোষণা বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমি গিয়ে প্রিসাইডিং অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলাম ফলাফল কেন স্থগিত করা হলো। তিনি বললেন ফলাফল স্থগিত করা হয়নি। এটাকে কিউলিটি পদ্ধতিতে ঘোষণা করা হবে। সেই ফলাফল ঘোষণা করল রাত দুইটা ৩৮ কিংবা ৪০ মিনিটে। তারা বলেছে যেখানে ফলাফল ঘোষণা করতে আধা ঘন্টা লাগবে সেখানে ১৪ ঘণ্টা ১৫ ঘন্টা লাগল কি করে? অর্থাৎ ২০১৪ সালে তারা প্রার্থীবিহীন ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছে। ২০১৮ সালে করেছে আগের রাতে নির্বাচন। এবার করেছে মেশিনের নির্বাচন। মানুষকে দিয়ে যতটা করেছে মেশিন দিয়েও ততটা করেছে।
আওয়ামী লীগকে ম্যানিমেল মন্তব্য করে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ম্যান এবং এনিমেল মিলে হয় ম্যানিমেল আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই ম্যানিমেল। এরা যে কখনো মানুষ হয় ,কখনো পশু হয় এটা বুঝতে বুঝতে বিএনপি’র সময় শেষ। বিএনপি’র হাতে আর বেশি সময় অবশিষ্ট আছে বলে আমি মনে করিনা।
খালেদা জিয়ার কারাবরণের নয় এটা বিএনপি’র লজ্জার দুই বছর পূর্তি মন্তব্য করে তিনি বলেন, মিডিয়াতে দেখলাম লিখেছে খালেদা জিয়ার কারাবরণের দুই বছর পূর্তি। এটা তার কারাবরণের দুই বছরের পূর্তি নয় এটা বিএনপি’র লজ্জার ২ বছর পূর্তি কারণ কিছুই করতে পারিনি। এক বিচারপতি আমাকে বলেছেন দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের সমর্থন থাকা অবস্থায়ও আপনারা কিছুই করতে পারেন নি। আপনাদেরকে তো বারোমাসই জেলে থাকা উচিত। তারপরও এই জিনিসগুলো কি আমরা অনুধাবন করতে পারছি না? নাকি আমাদের মনের মধ্যে আছে যে শেখ হাসিনার কোনো ইচ্ছা আমরা অপূর্ণ রাখবো না। এই ধরনের কেউ যদি থেকে থাকে সেটা আগে চিহ্নিত করা দরকার।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো দুর্বল বিশেষ করে রাজধানীতে এটা আগে ঠিক করা দরকার। তবে আমরা যদি নির্বাচনের জিততাম তারপরে কি হতো? এর আগে পাঁচ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের সমর্থিত কাউন্সিলর ২৮৩ জনকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি চিঠির মাধ্যমে বরখাস্ত করেছিল। পরে আওয়ামী লীগের কোনো একজনকে সে জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দুই সিটি নির্বাচনে যদি আমরা জিততাম তাহলে হতো টা কি? বলেন আমাকে কেউ। জেলখানা যেতে হতো সুতরাং যারা আমাদেরকে ঘনঘন জেলখানায় পাঠায়, নির্বাচিত হওয়ার পরেও দায়িত্ব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করে তাদেরকে নিয়ে কি ব্যবস্থা করা যায় সেই চিন্তাটা আগে করেন।
আয়োজক সংগঠনের উপদেষ্টা কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদুসহ অনেকেই।